ধূমপান (Smoking) স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। এর থেকে ক্যান্সার (Cancer) হতে পারে। কথাটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু ধূমপান যত সহজে শুরু করা যায়, এই অভ্যাস ত্যাগ করা কিন্তু খুব কঠিন।
তামাক এবং নিকোটিন আপনার ফুসফুসকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। শুধু তাই নয় এটি আপনার শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে প্রভাবিত করে। তার ফল ভয়ঙ্কর হতে পারে।
ধূমপান ছাড়ার জন্য নীচে 10টি টিপস দেওয়া হল। এবং আপনি এই উপায়গুলি ব্যবহার করতে পারেন অথবা আপনার জন্য মানানসই উপায় বেছে নিতে পারেন।
Table of Contents
1. কেন ধূমপান ছাড়বেন? সেই কারণ চিহ্নিত করুন (Identify reasons to quit)
ধূমপান ছাড়ার সুবিধাগুলি এক জায়গায় লিখুন, তারপর আপনি কী করছেন এবং কেন করছেন সেটা বিশ্লেষণ করুন। এটা আপনার চিন্তাভাবনা এবং উদ্দেশ্যকে পুনর্গঠন করতে সাহায্য করবে। ধূমপান ত্যাগের সুবিধাগুলি লিখুন, উদাহরণ স্বরূপ:
আপনার সাধারণ স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হবে।
আপনার এই দুর্দান্ত সিদ্ধান্ত আপনার পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফোটাবে।
আপনি অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন এবং সেটা ভালো কাজে লাগাতে পারবেন।
আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
নিজের ভিতর থেকে এনার্জি পাবেন।
আপনি সহজে নিঃশ্বাস নিতে পারেন।
আপনাকে আরও কম বয়সী দেখতে লাগবে ইত্যাদি।
2. কোনও কিছু কী আপনাকে বাধ্য করে? চিহ্নিত করুন (Identify triggers)
এমনটা অনেক সময় হয়ে থাকে, যে আপনার ধূমপানের তাগিদ অনুভব হয়। স্থান, কাল, পাত্র হিসেবে সেটা নির্ভর করে। বন্ধু-বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে অনেক সময় সিগারেটে টান দিতে হয়। আবার আশপাশের পরিবেশ এমন থাকে, যে আপনিও ধূমপান করতে বাধ্য হন। এইরকম পরিস্থিতিতে ধূমপানের বদলে ভালো কোনও বিকল্প বেছে নিন। আপনি কোথায় কোথায় যাচ্ছেন তার একটা রেকর্ড রাখতে পারেন, যেমন ধরুন লাইব্রেরি, যাদুঘর বা শপিং মল। অন্য কোনও ভালো জিনিসে নিজেকে নিযুক্ত করুন, যেটা আপনার মস্তিষ্ককে প্রোডাক্টিভ থাকতে সাহায্য করতে পারে।
3. একটা দিন নির্দিষ্ট করুন (Pick a date to quit)
আপনার শেষ সিগারেট জ্বালানোর আগে একটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করুন। মনে মনে সংকল্প করুন যে উচ্চ, নিচু যাই হোক না কেন, আপনি কখনই তামাকের আরেকটি কাঠিতেও আগুন ধরাবেন না। এই ধরণের ইতিবাচক চিন্তাভাবনা আপনাকে শক্তি জোগাবে এবং এই অভ্যাস ত্যাগ করতে সাহায্য করবে।
4. অন্যদের জানান (Let people know)
আপনার আশপাশের মানুষদের জানান যে আপনি ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছেন, সেটা আপনাকে অনেকটা সাহায্য করবে। তাতে যখন কেউ ধূমপানের প্রস্তাব আপনাকে দেবে তাদের যেন আপনি মানা করতে পারেন। আপনি কবে ধূমপান ছেড়েছেন, কীভাবে এই অভ্যাস ছেড়েছেন, ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা করার পরিবর্তে শুধু বলুন ”না, ধন্যবাদ। আমি ধূমপান করি না।’’
5. অ্যাশট্রে, লাইটার, সিগারেট থেকে পরিত্রাণ পান – এই জিনিসগুলি সরিয়ে রাখুন যাতে আপনার ধূমপানের কথা মনে না পড়ে (Get rid of ashtrays, lighters, cigarettes)
অ্যাশট্রে, লাইটারের মতো ছোটো ছোটো জিনিসগুলি সরিয়ে রাখুন, নয়তো ওগুলো দেখলেই ধূমপানের ইচ্ছে জাগতে পারে। আপনি আবেগপ্রবণ হয়ে উঠতে পারেন। এর মানে এই নয় যে আপনি এটি সম্পর্কে চিন্তা করা বন্ধ করে দেবেন। তবে এটি পুরানো অভ্যাস ত্যাগ করতে এবং নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
6. আপনার মুখে অন্য কিছু রাখুন (Put something else in your mouth)
সারাদিনে অল্প অল্প করে ঘন ঘন খাবার খান, তাতে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। ফল, শাকসবজি এবং স্বাস্থ্যকর খাবার ডায়েটে রাখুন। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর ‘শুধু একটা টান’ বলে কিছু হয় না। এর পরিবর্তে ফলের রসে চুমুক দিন বা ভালো কিছু খান।
7. ওষুধ নেওয়ার জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন (Consult your doctor for pills that might help)
ধূমপানের অভ্যাস কাটিয়ে তোলার জন্য কিছু ওষুধ রয়েছে যা লালসা এবং প্রত্যাহারের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। কোনটা আপনার জন্য উপযুক্ত এবং নিকটবর্তী বাজারে পাওয়া যায় তা জানতে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
8. এমন কাউকে মনের সব কথা খুলে বলুন, প্রয়োজনে তাঁকে কল করুন (Have someone you can call if you feel like giving up)
ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তো নিলেন, কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকা কিন্তু কঠিন। দিন কয়েক নিজেকে সংযত রাখার পর আপনার আবার ধূমপানের ইচ্ছে জাগতে পারে। তখন এমন কারও সাথে মনে কথা শেয়ার করুন, যে আপনাকে সাহায্য করবে। সে আপনার বাড়ির কেই হতে পারে বা বন্ধু-বান্ধব হতে পারে। প্রয়োজনে আপনার সেই বন্ধুকে মাঝ রাতেও কল করুন, তাকে বলুন যে আপনি কোনও পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এবং ঘন ঘন তাঁকে কল করতে পারেন সেটাও জানিয়ে রাখুন।
9. কম্বিনেশন থেরাপি (Combination therapy)
তামাক ছাড়ার জন্য আপনি কম্বিনেশন থেরাপি ব্যবহার করতে পারেন তাতে দ্রুত ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আপনার একমাত্র লক্ষ্য হল নিকোটিন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা। তার জন্য কোনও কম্বিনেশন থেরাপি আপনার প্রয়োজন সেবিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
10. নিজেকে পুরস্কৃত করুন (Reward yourself)
পুরষ্কারগুলি আপনাকে আরও অনুপ্রেরণা জোগাবে। এভাবেই এগিয়ে যান এবং আপনার বন্ধু বা পরিবারের সাথে ছুটির দিনে একসঙ্গে সময় কাটান। নিজেকে পুরস্কৃত করা মানে হল সেটা আপনি নিজে অর্জন করেছেন এবং এই ইতিবাচক চিন্তাভাবনা আপনা সর্বদা সফল হতে সাহায্য করবে।
ধূমপান ক্যান্সারের কারণ। সময় থাকতে সাবধান হোন!
আরও পড়ুন – কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন ফুসফুসের ক্যান্সার? জানুন