সব শিশুরই বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টির প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব শিশুদের ক্যান্সার ধরা পড়েছে তাদের দরকার বাড়তি যত্ন। চিকিৎসা চলাকালীন তারা যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে তার জন্য অতিরিক্ত পুষ্টি প্রয়োজন।
সাধারণত সুপারিশ করা হয় যে এই সময় যাতে শিশুদের একটি উচ্চ ক্যালোরি (high calorie) এবং উচ্চ প্রোটিনযুক্ত (high protein) খাবার দেওয়া হয়।
আপনার সন্তানের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বেশি করে প্রোটিন যোগ করতে পারে এমন তিন ধরণের খাবার রয়েছে, সেগুলি হল:
- ডিম এবং চর্বিহীন মাংস: মুরগি, মাছ, ডিম, ল্যাম্ব, টার্কি
- দুগ্ধজাত পণ্য: কটেজ চিজ, পনির, অন্যান্য ধরণের পনির (যেমন ক্রিম পনির), দই
- পিনাট বাটার (রুটি, পাউরুটি, বিস্কুট, ক্র্যাকার, আপেলের টুকরোর উপর এবং গাজরের মতো স্যালাডে যোগ করতে পারেন)
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/02/shutterstock_404235652-e1605670496188.jpg)
পাউরুটির উপর পিনাট বাটার
প্রোটিন ছাড়াও, আপনার সন্তানের পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট এবং ফ্যাটও প্রয়োজন।
শিশুদের ক্যান্সার ধরা পড়লে তাদের পুষ্টির বিষয়ে বাবা-মায়েরা চিন্তিত হয়ে পড়েন বেশি করে। আসুন সবচেয়ে সাধারণ কিছু সমস্যার সমাধান দেখে নেওয়া যাক।
Table of Contents
“আমার সন্তানের ওজন কমছে।”
আসুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে আপনার সন্তানের ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা বাড়াতে পারবেন:
- রুটি, টোস্ট, সবজি ইত্যাদি সহ সমস্ত খাবারে ঘি (বাটার) যোগ করুন।
- পনিরের কিউব বা স্ট্রিং চিজ বাচ্চাদের খাওয়ার সাথে সাথে খেলার জন্য একটি মজাদার খাবার হতে পারে।
- যে কেনও মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন, মিষ্টি, মিল্কশেক, পায়েস ইত্যাদিতে দুধের গুঁড়ো যোগ করুন।
- শিশুরা মিষ্টি কনডেন্সড মিল্ক বেশ পছন্দ করে। সে পাউরুটির বা রুটির উপর লাগিয়ে খেতে পছন্দ করে। এমনকি তারা এটা চামচ দিয়েও খেতে ইচ্ছুক হতে পারে।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/02/shutterstock_1647045562-e1605670559436.jpg)
রুটির উপর কনডেন্সড মিল্ক
বাচ্চার যাতে ওজন না কমে তার জন্য আপনার ডাক্তার দোকান থেকে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত পানীয় কেনার পরামর্শ দিতে পারেন।
“আমার সন্তান খাবার নিয়ে বায়না করে।”
সাধারণত এটি সুপারিশ করা হয় যে আপনি আপনার সন্তানের পছন্দের খাবারগুলি সনাক্ত করুন এবং চিকিত্সা চলাকালীন তাকে সেগুলি খাওয়ার অনুমতি দিন। এর মানে হল যে তারা সময়ে সময়ে জ্যাম, কাস্টার্ড ইত্যাদি খেতে পারে কোনওরকম বাধা-নিষেধ ছাড়াই।
তবে, এগুলোর পাশাপাশি তারা স্বাস্থ্যকর পুষ্টি পাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু টিপস দেওয়া হল:
- কুকি কাটার ব্যবহার করে গমের আটার প্যানকেকগুলি স্টার এবং হার্টের মতো আকারে তৈরি করুন। প্যানকেকের উপরে ম্যাপেল সিরাপ এবং ক্রিম যোগ করুন যাতে সেগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/02/shutterstock_212023570-e1605671505860.jpg)
টেডি বিয়ার আকৃতির প্যানকেক
2. খাবারে বীটরুট বা গাজরের রসের মতো প্রাকৃতিক খাবারের রঙ যোগ করুন যাতে সেগুলি নতুন এবং আকর্ষণীয় দেখায়।
3. মিল্ক শেক, দই এবং পুডিংয়ে খেজুরের সিরাপ যোগ করুন।
আপনি যে খাবাপ পরিবেশন করেন তা ছাড়াও, খাবার খাওয়া সময় যা ঘটে তা আরও ভালো খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।
- শিশুর সাথে একই সময়ে পরিবারের আরও সদস্যদের খেতে দিন। এটি তাদের জন্য খাবার খাওয়ার সময়কে আরও মজাদার করে তুলবে।
- বাচ্চাকে বেশি খাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া এড়িয়ে চলুন এবং খাবারের সময় কথোপকথন বন্ধুদের বা গল্পের মতো আনন্দের জিনিসগুলির চারপাশে হতে দিন।
- মজাদার স্ন্যাকস যেমন পিৎজা (তাদের নিজস্ব টপিংস নির্বাচন করা), স্যান্ডউইচ, ফলের চাট বা কুকিজ তৈরিতে শিশুকে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দিন। এটি তাদের আরও খেতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/02/shutterstock_556709152-e1605671150492.jpg)
একসাথে পিৎজা তৈরি করুন
4. সময়ে সময়ে দৃশ্য পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, মেঝের উপর আসন পেতে সকলে একসাথে পিকনিক করুন, একটি পিকনিকের ঝুড়ি এবং একটি ফ্লাস্ক থেকে দুধ পরিবেশন করুন। অথবা আপনি সপ্তাহে একবার রেস্টুরেন্টের মতো খাবার খেতে পারেন, যেখানে আপনি টেবিল সেট করে এবং ওয়েটারের মতো পোশাক পরে পরিবেশন করুন।
5. তাদের একটি বন্ধু বা প্রতিবেশীকে খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে দিন। তাদের মেনু ঠিক করার অনুমতি দিন যাতে তারা খাবার সম্পর্কে তারা আরও উৎসাহী অনুভব করে।
“আমার সন্তান কম পরিমাণে খাবার খায়।”
যদি আপনার সন্তান একবারে বেশি খেতে না পারে, চেষ্টা করুন এবং প্রতি দুই ভারী খাবারের মধ্যে ছোটো ছোটো স্ন্যাকস অন্তর্ভুক্ত করুন। এখানে কিছু মজাদার স্ন্যাকস রয়েছে যা তাদের ভালো ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
- আলু: বেশিরভাগ শিশুই এগুলো পছন্দ করে। আপনি এগুলিকে চিপস, ওয়েজস, ম্যাশ অথবা সিঙাড়ার মধ্যে পুর এবং পাফগুলিতে স্টাফিং হিসাবে পরিবেশন করতে পারেন। তাদের জন্য এটি আরও আকর্ষণীয় করতে সঙ্গে একটু সস, মেয়োনিজ বা চাটনি দিন।
- ডিম: আপনার হাতে কম সময় থাকলে এগুলি একটি সহজ স্ন্যাকস বিকল্প। ওমলেট, স্ক্র্যাম্বল, বুলস আই, ফ্রেঞ্চ টোস্ট বা পরোঠা এবং স্যান্ডউইচের ভিতরে স্টাফিং হিসাবে ডিম ক্যবহার করতে পারেন।
- নুডুলস এবং পাস্তা: আপনি আপনার সন্তানের পছন্দের উপর ভিত্তি করে এগুলি দিয়ে লোভনীয় খাবার তৈরি করতে পারেন।
- দই: স্বাদের জন্য দইয়ে ফল, জাম, সিরাপ, মধু ইত্যাদি যোগ করুন।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/02/shutterstock_380597566-e1605671205173.jpg)
মধু দিয়ে দই
“আমার সন্তানের ডায়রিয়া হয়েছে।”
শিশুদের ক্যান্সার হলে ক্যান্সার চিকিৎসার সাধারণ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। কিন্তু এটির জন্য অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে কিনা তা জানার জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা সবসময়ই ভালো।
- আপনার সন্তানের তরল খাবার গ্রহণের মাত্রা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ কারণ ডায়রিয়া থেকে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। জল ছাড়াও, নারকেল জল, স্মুদি, স্যুপ এবং জুসগুলিও সাহায্য করবে। আপনি এখানে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের রেসিপি খুঁজে পেতে পারেন।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/02/shutterstock_530333851-e1605672976237.jpg)
দারুচিনি দিয়ে আপেল স্মুদি
2. ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলি যেমন মুখের শুষ্কতা, প্রস্রাবের কম ফ্রিকোয়েন্সি বা প্রস্রাবের গাঢ় রঙ এবং মাথা ঘোরা ইত্যাদির জন্য দেখুন। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
3. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন সব ধরনের ডাল (মসুর এবং মটরশুটি), শুকনো ফল ইত্যাদি কমিয়ে দিন যতক্ষণ না ডায়রিয়া কমে যায়।
4. কাঁচা ফল এবং সবজি এড়িয়ে চলুন।
“আমার সন্তানের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে।”
সাধারণত উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় কিন্তু যখন ওষুধের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, তখন শুধু খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন সাহায্য নাও করতে পারে। উপযুক্ত উপায় সম্পর্কে জানতে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
আপনার সন্তান যাতে প্রচুর পরিমাণে তরল গ্রহণ করে এবং সারাদিন সক্রিয় থাকে সেটা নিশ্চিত করুন।
“আমার বাচ্চার বমি বমি ভাব হয় এবং প্রায়ই বমি করে।”
- স্যুপ, নরম ভাত, টোস্ট করা রুটি এবং ক্র্যাকারের মতো সহজে হজম করা যায় এমন খাবারগুলি খাওয়ান।
- খাবার পরিমাণে কম করুন এবং বার বার খাওয়ান।
- শিশুকে সারাদিনে ফলের রস দিন বা জলে জিরা বা পুদিনা পাতা যোগ করে সেই জল দিন।
- খাবারের অতিরিক্ত তাপমাত্রা (খুব গরম বা খুব ঠান্ডা) এবং স্বাদ (মশলাদার, মিষ্টি, স্ট্রং ফ্লেভার) এড়িয়ে চলুন।
- বমি বমি ভাব কমাতে আদা মিছরি, পেপারমিন্ট বা অন্যান্য ধরণের শক্ত ক্যান্ডি ব্যবহার করে দেখুন।
শিশুদের ক্যান্সার ধরা পড়লে ডায়েটে কোনও বড়সড় পরিবর্তন করার আগে এবং নতুন খাবার অন্তর্ভুক্ত করার আগে আপনার অনকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করতে ভুলবেন না।
আপনি পুরো সপ্তাহের জন্য সমস্ত খাবারের পরিকল্পনা করতে ইন্ডিয়ান ডায়েট প্ল্যানটি ব্যবহার করতে পারেন। আপনি এটি ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করতে পারেন।
আপনার যদি ক্যান্সারের ডায়েট সম্পর্কিত কোনও নির্দিষ্ট প্রশ্ন থাকে, আপনি আমাদের community@onco.com এ ইমেল করতে পারেন বা 79965 79965 নম্বরে কল করতে পারেন।
আরও পড়ুন : খবরের কাগজের ঠোঙায় খাবার খান? সাবধান! হতে পারে ক্যান্সার