ক্যান্সার রোগীদের জন্য ৮টি সুপারফুড (Superfoods for Cancer Patients)

by Team Onco
816 views

বর্তমানে সুপারফুড ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হলেও এই ধারণাটি বৈজ্ঞানিক নীতির উপর ভিত্তি করে বিকশিত হয়নি। হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের একটি নিবন্ধ অনুসারে, এই ধারণাটি ২০ শতকে শুরু হয়েছিল। যখন একজন কলা বিক্রেতা কলার পুষ্টিগুণগুলি তুলে ধরে একটি বিপণন প্রচারাভিযান চালু করেন এবং যেভাবে এর  বিক্রি বেড়েছিল, অবিশ্বাস্য সাফল্য দেখা গিয়েছিল। একই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে বহু সংস্থা কোটি কোটি টাকা লাভ করেছে এবং ধীরে ধীরে সুপারফুডের ধারণা জনপ্রিয়তা অর্জন করে। যা একেবারে চিন্তার বাইরে। সুপারফুড হল এমন কিছু খাবার যা আমাদের শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেয়।

সুপারফুড (Superfood) হল এমন খাবার – বেশিরভাগই ভেষজ কিন্তু কিছু মাছ এবং দুগ্ধজাত খাবার স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো। এতে রয়েছে উচ্চ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। সুপারফুড খুবই পরিচিত একটি শব্দ, যা সুস্বাস্থ্যকর, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, ভেষজ খাবার এবং পরিপূরকগুলির সমার্থক।

একজন ব্যক্তির ক্যান্সার ধরা পড়ার পর, তিনি তার জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন হয়ে ওঠেন। অনেক রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করেন। যদিও এটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করা উচিত। আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে ডায়াটেশিয়ান আপনাকে সঠিক ডায়েট পরিকল্পনা করতে সাহায্য করতে পারেন।

ক্যান্সার রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি স্বাস্থ্যকর শরীরের ওজন বজায় রাখতে এবং রোগ নিরাময় এবং আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর খাবার সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, শরীরের টিস্যুগুলিকে ভেঙে যাওয়া রোধ করতে এবং নতুন টিস্যু তৈরি করতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে শরীরের হাইড্রেশন স্তর বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং গবেষণা নেই যে নির্দিষ্ট কোনও খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে বা রোধ করতে পারে। তবে সঠিক পুষ্টি সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তা ক্যান্সার রোগীদের জন্য আরও বেশি। অর্থাৎ সুষম খাদ্য, ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত ভেষজ খাবার আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সেইসঙ্গে চিকিৎসা চলাকালীন শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়।

এখানে আমরা ক্যান্সার রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার সম্পর্কে আলোচনা করব।

ক্যান্সার রোগীর কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত?

ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, সার্জারি, ইমিউনোথেরাপি বা এর মধ্যে থেকে কোনও সংমিশ্রণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি প্রায়শই ওজন এবং শক্তি হ্রাস করে এবং আপনাকে ক্লান্ত করে দেয়।

চিকিৎসা চলাকালীন শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখতে আপনার দরকার অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং প্রয়োজন। এছাড়াও ক্যান্সার রোগীদের  চিকিৎসায় ভালো সারা পাওয়া যায়, যখন আপনি পর্যাপ্ত ক্যালোরি এবং প্রোটিন গ্রহণ করেন এবং শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পান।

অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং প্রোটিন পেতে এখানে কিছু টিপস রইল:

  • একবারে বেশি খাবার খাওয়ার বদলে খাবার অল্প অল্প করে সারাদিনে অনেকবার খান।   
  • কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অল্প খাবার খান। খিদে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না।
  • আপনার পছন্দের স্যালাড বা ডেজার্টের উপর বাদাম বা ওই জাতীয় বীজ ছড়িয়ে দিন।
  • যখন খুব খিদে পাবে, সবচেয়ে বেশি খাবার খেয়ে নিন। উদাহরণস্বরূপ, যদি সকালে সবচেয়ে বেশি খিদে পা তাহলে সকালে ভারী জলখাবার খান।
  • আরও উচ্চ-ক্যালোরি, উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত পানীয় খান।
  • খাবার খাওয়ার সময় জল না খেয়ে, খাবার খাওয়ার আগে বা পরে জন খান। খাবারের সঙ্গে জল খেলে অল্পতেই পেট ভরে যাবে।
  • খিদে বাড়াতে খাবার আগে একটু হাঁটাহাঁটি করুন বা হালকা ব্যায়াম করুন।
  • আপনার পছন্দের খাবারটি খেতে যদি খুব ইচ্ছে হয়, অবশ্যই সেটা খান। নিজের ইচ্ছেকে অমান্য করবেন না।
  • বাজারে উপলব্ধ বা বাড়িতে তৈরি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বার অথবা পুডিং খান।

ক্যান্সার রোগীদের জন্য সুপারফুড

সুপারফুড সহজেই হজম হয়, তৈরি করাও সহজ এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর যা আপনাকে ক্যান্সারের চিকিৎসার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াগুলির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য় করে। ক্যান্সার রোগীর খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে এমন কিছু সুপারফুড নীচে উল্লেখ করা হল:

১. বেরি এবং অন্যান্য ফল (Berries and other fruits): যে ফলগুলি খেতে সহজ, সতেজ এবং জলের মাত্রা বেশি রয়েছে সেগুলি হল সবচেয়ে সেরা। এর মধ্যে রয়েছে বেরি, তরমুজ, কলা, আনারস, নাশপাতি ইত্যাদি।

ব্লুবেরিতে (Blueberries) বেশ কিছু ফাইটোকেমিক্যাল এবং পুষ্টি উপাদান রয়েছে যার মধ্যে অ্যান্টি-ক্যান্সার প্রভাব, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে এবং এটি ডিএনএ ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে।   

 

রাসবেরি এবং স্ট্রবেরি (Raspberries and strawberries) ভিটামিন সি, ফাইটোকেমিক্যাল এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।

টম্যাটোতে (Tomatoes) লাইকোপিন নামক একটি ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কম করতে পারে।

২. শাক (Dark leafy vegetables): শাকসবজি যেমন কালে (Kale) এবং পালং শাক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি ফাইবা এবং ফোলেট সমৃদ্ধ, যা কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ফোলেট নতুন কোষ তৈরি করতে এবং ডিএনএ মেরামত করতে সাহায্য করে।

কালের মধ্যে ক্যারোটিনয়েড রয়েছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ায়। এই প্রতিরক্ষা ক্ষমতা ফ্রি রেডিক্যালসগুলিকে ডিএনএ-র ক্ষতি থেকে বাধা দেয়। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোটিনয়েড সমৃদ্ধ যেমন জেক্সানথিন এবং লুটেইন রয়েছে যা শরীর থেকে ফ্রি রেডিক্যালস দূর করে।

 

৩. গাজর (Carrots): গাজরের মধ্যে রয়েছে বেটা-ক্যারোটিন (একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট), ভিটামিন এবং ফাইটোকেমিক্যাল যা বিভিন্ন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এছাড়াও গাজরে ফ্যালকারিনল নামক প্রাকৃতিক কীটনাশন রয়েছে, যার মধ্যে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে।

জার্নাল অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে রান্না করা গাজরের থেকে কাঁচা গাজরে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। গাজর সিদ্ধ করে কেটে নিন, এতেও ফ্যালকারিনল সহ গাজরের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।

৪. দানা শস্য (Whole grains): দানা শস্য প্রচুর ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ফাইটোকেমিক্যালস, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। গোটা দানা শস্যে এমন কিছু পদার্থ থাকে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে, যার মধ্যে রয়েছে স্যাপোনিন, যা ক্যান্সার কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি রোধ করতে পারে এবং লিগন্যানস, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

চিনের সুচো ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, যে উচ্চ ফাইবার উপাদান, হরমোন নির্ভর ক্যান্সারের ক্রিয়াকে পরিবর্তন করতে পারে। এমন খাবার বেছে নিন যাতে ১০০% গোটা শস্য দানা রয়েছে।

৫. মাছ এবং মাংস (Meat and poultry): সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রোটিনেরও প্রয়োজন। মুগরির মাংস, মটন, মাছ সবই প্রোটিনের ভালো উৎস। তবে প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলা ভালো। এছাড়াও, শুধুমাত্র সঠিকভাবে রান্না করা, মাছ, মাংস, ডিম খান। কাঁচা বা আধসেদ্ধ খেলে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

৬. ক্রুসিফেরাস ভেজিটেবল (Cruciferous vegetables):  ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপির মতো সবজিতে গ্লুকোসিনোলেটস নামক ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা প্রতিরক্ষামূলক এনজাইম তৈরি করে। এই সবজি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা ব্রকলি বা সেদ্ধ করে খেতে পারেন, তাতে সামান্য রসুন এবং অলিভ অয়েল যোগ করে নিন।

৭. দই (Yoghurt): টক দই হজমের জন্য খুব উপকারী, এটি নির্দিষ্ট প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং খাওয়াও সহজ। বাড়তি স্বাদ আনতে এতে সামন্য দারুচিনি, বেরি বা বাদাম যোগ করা যেতে পারে।

৮. সোয়া (Soy):  সোয়াতে আইসোফ্ল্যাভোনস নামে একটি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পরিমিত পরিমাণে সোয়া, যেমন সোয়া দুধ, টোফু খাওয়া যেতে পারে। 

সবমিলিয়ে আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে খাদ্য তালিকা হতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ। একটি সুপারপ্লেট ডায়েট হতে হবে যাতে শরীরে  প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পৌঁছায়।

আরও পড়ুন –

ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ক্যান্সার ডায়েট

ক্যান্সারের চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনও সাহায্যের জন্য  9019923337 নম্বরে কল করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন নিকটবর্তী Onco ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারে যান, অথবা ডাউনলোড করুন Onco Cancer Care অ্যাপ।

(https://www.utahfoodbank.org)

Related Posts

Leave a Comment