বাঙালির রান্না ঘরে মশলার কদরই আলাদা। মশলা ছাড়া রান্না! কল্পনাও করা যায় না। তবে শুধু রান্নায় স্বাদ আনে না, এমন অনেক মশলা রয়েছে যা শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তাইতো কাশি, সর্দি, বদহজম এবং প্রদাহের মতো নানা সমস্যা নিরাময়ের জন্য সেই প্রাচীনকাল থেকে বাঙালি সংস্কৃতিতে মশলা ব্যবহার হয়ে আসছে।
যদিও ক্যান্সার একটি জটিল রোগ যা শুধুমাত্র খাদ্যের মাধ্যমে নিরাময় করা যায় না। তবে কিছু খাবার ক্যান্সারের চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
এখানে আমরা এমনই পাঁচটি মশলার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব যা সাধারণত আমাদের প্রত্যেকের রান্নাঘরে পাওয়া যায়।
-
Table of Contents
আদা
- আদার গন্ধ এবং স্বাদ বমি বমি ভাব এবং বমির মতো কেমোথেরাপির বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে।
- এটি হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়।
- এটি প্রদাহ কম করে (ফোলা, লালভাব, জ্বালা ইত্যাদি)।
- এতে রয়েছে ভিটামিন C যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আপনি আপনার স্যুপে সামান্য আদা গ্রেট করে যোগ করতে পারেন, যেমন গাজর স্যুপ এবং মিষ্টি আলুর স্যুপ। সেইসঙ্গে কোনও সবজির রেসিপিতেও আদা যোগ করতে পারেন।
আদার উপকারিতা পেতে এই সহজ রেসিপি বাড়িতেই বানিয়ে দেখতে পারেন:
আদা চায়ের রেসিপি
উপাদান
- 1 টুকরো আদা
- এক টুকরো লেবু, খোসা ছাড়ানো (ঐচ্ছিক)
- 1 চা চামচ মধু
পদ্ধতি
- আদার এক টুকরো খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিন।
- পরিষ্কার জলে ভালো করে ফুটিয়ে নিন যতক্ষণ না আদার সুগন্ধ স্পষ্ট হচ্ছে।
- আপনি চাইলে এতে খোসা ছাড়ানো সামান্য লেবু যোগ করতে পারেন।
- আদা চা ঠান্ডা হয়ে গেলে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে হালকা গরম গরম পরিবেশন করতে পারেন।
-
হলুদ
হলুদে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আপনার কোষকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি-র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে।
এটিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এবং এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রায় সব ভারতীয় তরকারি এবং ভাজাতে হলুদ ব্যবহার হয়ে থাকে। আপনি এটি ভাতের বিভিন্ন রেসিপি যেমন পোলাও, ফ্রায়েড রাইস ইত্যাদি তৈরির সময় হলুদ ব্যবহার করতে পারেন।
এখানে হলুদ দিয়ে তৈরি একটি উষ্ণ এবং আরামদায়ক পানীয়র রেসিপি তুলে ধরা হল যা প্রতিদিন উপভোগ করা যেতে পারে।
গোল্ডেন মিল্কের রেসিপি
উপাদান
- 1 কাপ ফ্রেশ নারকেল দুধ (কীভাবে এটি তৈরি করতে পারেন নীচে দেখুন) বা যে কোনও লো ফ্যাট দুধ
- ¼ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
- 1 চা চামচ মধু
পদ্ধতি
আপনি প্রথমে নারকেল কুঁড়ে বা গ্রেট করে নিয়ে নারকেল দুধ তৈরি করতে পারেন। তারপরে কোঁড়ানো নারকেলে সামান্য জল মিশিয়ে ব্লেন্ডারে পিষে ফিল্টার করে দুধ ছেঁকে নিতে পারেন। নারকেল দুধের পরিবর্তে আপনি অন্য কোন লো ফ্যাট দুধও ব্যবহার করতে পারেন।
এই দুধটি সামান্য গরম করে তাতে এক চতুর্থাংশ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মেশান।
এক চা চামচ মধু যোগ করুন এবং ভালভাবে নেড়ে নিন।
-
রসুন
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে রসুনের জুরি মেলা ভার। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। এমনকি কিছু গবেষণায় এটাও দাবি করা হয়েছে, যে এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে বাঁধা দিতে পারে।
তবে রসুন পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত কারণ এটি নির্দিষ্ট পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে, আপনি কোন ওষুধ খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে। সন্দেহ থাকলে আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
রসুন চায়ের রেসিপি
উপকরণ
- 2টি রসুন কুচি
- ½ কাপ মধু
- আধা কাপ লেবুর রস
পদ্ধতি
- খোঁসাযুক্ত দু’কোয়া রসুন জলে ভালো করে ফুটিয়ে নিন।
- তিন-চার মিনিট ফুটে উঠলে আঁচ বন্ধ করে দিন।
- স্বাদ বাড়াতে এবং পানীয়ের পুষ্টিগুণ উন্নত করতে আধা কাপ মধু এবং আধা কাপ লেবুর রস যোগ করুন।
- আপনি এই পানীয়টি গরম গরম করে খেতে পারেন।
-
দারুচিনি
দারুচিনি দুই প্রকার। ভারতীয় রন্ধনশৈলীতে যেটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এবং বাজারে আরও বেশি পাওয়া যায় তা হল ‘ক্যাসিয়া বার্ক’ জাত। এটি সাধারণত বিরিয়ানি এবং অন্যান্য মশলাদার খাবারে ব্যবহৃত হয়।
‘সিলন’ দারুচিনি নামক হালকা এবং কুঁচকানো জাতটি অ্যাপল পাইয়ের মতো মিষ্টিতে ব্যবহৃত হয়।
‘সিলন’ জাতের দারুচিনি সাধারণত খুব কম পাওয়া যায়। যদিও সব ধরনের দারুচিনির কিছু উপকারিতা রয়েছে, তবে সিলন জাতের তুলনায় কম পরিমাণে রয়েছে এবং তাই অন্যান্য জাতের তুলনায় এটি পছন্দ করা হয়।
- দারুচিনিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এবং এতে প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
- এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।
যাইহোক, এটি অল্প পরিমাণে সেবন করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে কিডনি এবং লিভারের ক্ষতি হয়। প্রতিদিন অর্ধেক চা চামচের বেশি খাবেন না।
দারুচিনি কলা স্মুদির রেসিপি
উপকরণ
- 1টি পাকা কলা
- 2 চা চামচ ওটস
- ½ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো
- 1/2 চা চামচ চকোলেট পাউডার
- 1/2 কাপ জল
- 3 চা চামচ দই
- 1 চা চামচ মধু
- 2 চা চামচ কাটা বাদাম এবং কিশমিশ
পদ্ধতি
- সমস্ত উপাদান একটি ব্লেন্ডারে দিয়ে পিষে নিন।
- মিশ্রণটি ঘন করার জন্য একটি প্যানে গরম করুন। (ঐচ্ছিক)
- কুঁচি করা বাদাম এবং কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
-
এলাচ
- এলাচের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
- এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণে, এটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে পারে।
- এটি আলসার নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে এবং মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।
- কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে এটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস উন্নত করে।
এলাচযুক্ত চায়ের স্বাদ অনেকের কাছেই পছন্দেন এবং খির বা পায়েসে অন্য স্বাদ যোগ করতে এলাচ ব্যবহার করা হয়।
উষ্ণ এলাচ দুধের রেসিপি
উপাদান
- 1 কাপ কম চর্বিযুক্ত দুধ
- অর্ধেক দারুচিনি
- এলাচের শুঁটি ৪টি
- এক চামচ মধু
পদ্ধতি
- এলাচের শুঁটি আলতো করে গুঁড়ো করে নিন।
- একটি সসপ্যানে এলাচ ও দারুচিনি দিয়ে দুধ গরম করুন।
- স্বাদমতো মধু যোগ করুন।
- দুধ ফুটতে শুরু করলে আঁচ বন্ধ করে দিন।
- এটি দশ মিনিটের জন্য ঢাকা দিয়ে রেখে দিন।
- তারপর এটি ছেঁকে নিয়ে হালকা গরম পরিবেশন করুন।
আপনি যদি আপনার জন্য সঠিক খাদ্যতালিকা খুঁজছেন বা ক্যান্সার-সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে, আমাদের ইমেল করুন nutrition@onco.com এ। এছাড়াও আপনি এখানে একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারেন।
ক্যান্সারের চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনও সাহায্যের জন্য 9019923337 নম্বরে কল করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন নিকটবর্তী Onco ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারে যান, অথবা ডাউনলোড করুন Onco Cancer Care অ্যাপ।