ক্যান্সার চিকিৎসা চলাকালীন পায়ে ক্র্যাম্প! জানুন সমস্যা মোকাবিলা করার ১০টি উপায়

by Team Onco
355 views

ক্যান্সার রোগীরা তাদের ক্যান্সারের চিকিৎসার (cancer treatment) পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসাবে বা তাদের ক্যান্সারের প্রকৃতি এবং অবস্থানের কারণে পায়ে ক্র্যাম্প (leg cramps) অনুভব করতে পারেন।

কখনও কখনও অন্যান্য কারণ যেমন প্রাক-বিদ্যমান চিকিৎসা পরিস্থিতি বা ডিহাইড্রেশনের জন্যেও পায়ে ক্র্যাম্প হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে যদি কোনও কাজকর্ম না করেন তাহলেও এই অবস্থা হতে পারে।

আপনি যদি আপনার পা, গোড়ালি বা পায়ের পেশীগুলিতে ব্যথা অনুভব করেন তবে পায়ে ক্র্যাম্পের সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে পা নাড়াতে অসুবিধা হতে পারে, কারণ পেশীগুলি শক্ত হয়ে যায়।

এই নিবন্ধে আমরা আপনার সঙ্গে পায়ে ক্র্যাম্প হওয়ার কারণগুলি কি কি এবং এর থেকে নিস্তারের সহজ ১০টি উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

Leg Cramps during cancer treatment is very painful, পায়ে ক্র্যাম্প, leg cramps

পায়ে ক্যাম্প কী?

পায়ে ক্র্যাম্প খুবই বেদনাদায়ক, আপনার উরু, গোড়ালি এবং পায়ের পেশীগুলি শক্ত হয়ে যায়।

আপনি যদি ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে, তাহলে পায়ে ক্রাম্প হঠাৎ হঠাৎ বা প্রায়শই হতে পারে। যা পায়ের পেশীগুলিকে শক্ত করে তোলে এবং পা নাড়াতে অসুবিধা হয়।

যদি এই সমস্যা বেশ কয়েক মিনিট ধরে হয়, বা যদি রাতে এটি ঘটে তবে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

অতএব, ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালীন আপনি কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, তা আগে থেকেই জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের পায়ে ক্র্যাম্পের কারণ কী?

কিছু ক্যান্সারের কারণে পায়ে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে টিউমারের ক্ষেত্রে যা পেশীতে শুরু হয় বা পেশীতে চাপ সৃষ্টি করে।

যারা এখন ক্যান্সারের চিকিৎসা করাচ্ছেন এবং ইতিমধ্যেই পায়ে ক্র্যাম্প সমস্যায় ভুক্তভোগী। তবে বলে রাখি, এর মধ্যে এমন কয়েকটি ক্যান্সারে পায়ের ক্র্যাম্প আরও ভয়াঙ্কর হতে পারে।

ক্যান্সারের চিকিৎসার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে যে কারণে পায়ে ক্র্যাম্প হতে পারে সেগুলি হল:

  • কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ওষুধ
  • হরমোন থেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ওষুধ যেমন স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য
  • রেডিয়েশন থেরাপি যেটা আপনার শরীরের নিম্ন অংশে করা হয় যেমন নিতম্ব বা পায়ে
  • হাড়ের ক্ষয় নিরাময়ের জন্য ওষুধ
  • অনেক বেশি শ্বেত রক্তকণিকা থাকা বা খুব কম শ্বেত কণিকার জন্য চিকিৎসা
  • নির্দিষ্ট টিউমাপ, বিকিরণ বা ক্যান্সারের সার্জারির কারণে স্নায়ুর ক্ষতি
  • ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন অন্যান্য শারীরিক সমস্যা

ক্যান্সার ছাড়া অন্যান্য যে সমস্ত কারণে পায়ে ক্র্যাম্প হতে পারে:

  • পায়ে ক্ষতিগ্রস্ত পেশী ঘিরে টিউমারের বৃদ্ধি
  • স্পাইনাল কর্ডে আঘাত বা পিনচড নার্ভ যা পায়ের স্নায়ুর উপর চাপ দেয়
  • নির্দিষ্ট পেশীর অতিরিক্ত ব্যবহার বিশেষ করে ব্যায়ামের সময়
  • আপনার আশপাশের আবহাওয়ার পরিবর্তন
  • দীর্ঘদিন কাজকর্ম না করা বা বিছানা শুয়ে থাকলে পেশীর নড়াচড়া হয় না
  • ডিহাইড্রেশন, যা পর্যাপ্ত জল বা তরল না খাওয়ার ফল
  • পা এবং পেশীতে সঠিক রক্ত সঞ্চাচল না হওয়া
  • রক্তে ইলেক্ট্রোলাইট বা খনিজ পদার্থের মাত্রায় ভারসাম্যহীনতা বা পরিবর্তন, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, গ্লুকোজ বা চিনি, পটাসিয়াম বা ফসফরাস
  • কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস। যদিও ডায়ালাইসিস করা ব্যক্তিদের পায়ে ক্র্যাম্পের সঠিক কারণ অজানা, তবে এটি ডায়ালাইসিস সেশনের শেষের দিকে অতিরিক্ত তরল অপসারণের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়।
  • গর্ভাবস্থা

পায়ে ক্র্যাম্প, leg cramps

এই সমস্যা মোকাবিলা করতে পারেন ১০টি উপায়

যদিও পায়ের ক্র্যাম্প প্রাণঘাতী সমস্যা নয়, তবে এটি আপনাকে সাময়িক ঘায়েল করতে পারে। কারণ এটি বেদনাদায়ক, এটি আফনার প্রতিদিনের রুটিনকে প্রভাবিত করতে পারে এবং অন্যান্য স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করতে পারে।

আপনি যদি ক্যান্সারের চিকিৎসা করাচ্ছেন তবে এর কারণে আপনার ঘুমের সমস্যা হতে পারে। কারণ বেশিরভাগই রাতের দিকে এই সমস্যা দেখা দেয়।

পায়ে ক্র্যাম্পের জন্য আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন করার দরকার নেই, বিশেষ করে আপনি যখন ক্যান্সারের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছেন এবং আরোগ্য কামনা করছেন।

নীচে উল্লেখিত প্রতিকারগুলি ব্যবহারের আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করতে ভুলবেন না। কারণ ডাক্তারই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আপনাকে সঠিক পরামর্শ দেবেন, যে কোনটি আপনার শরীরের জন্য ভালো।

১. শুতে যাওয়ার আগে আলতো করে পা সোজা করুন বসুন। পায়ে ক্র্যাম্প না হলে এই অভ্যাস কয়েকবার করুন।

২. আপনার পা আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। উরু থেকে হাঁটু এবং গোড়ালি পর্যন্ত। তবে খুব জোরে চাপ দেবেন না। হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে তেল বা বডি লোশনের ব্যবহার করতে পারেন।

৩. খুব ঠান্ডা তাপমাত্রা অনেকের পায়ে ক্র্যাম্পের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে উষ্ণতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। ঢিলেঢালা, উষ্ণ লেগওয়্যার যেমন উলের মোজা পরুন। প্রয়োজনে আপনার পায়ের উপর কম্বল রাখুন, পায়ের কাছে গরম জলের বোতলও রাখতে পারেন।

৪. আপনি যদি শয্যাশায়ী বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন তালে মাঝে মাঝেই আপনার অবস্থান পরিবর্তন করুন এবং আপনার পা নড়াচড়া করুন। একবার করে পা ভাঁজ করুন এবং সোজা করুন। শুয়ে থাকা অবস্থায় স্ট্রেচিং ব্যায়ামটিও করতে পারেন।

৫. সারাদিনে পর্যাপ্ত জল এবং তরল খাবার খান। যদিও এর ফলে আপনাকে বার বার ওয়াশরুমে যেতে হবে। নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন যা পায়ে ক্র্যাম্পের সমস্যা প্রতিরোধ করবে।তবে যদি পায়ের ক্র্যাম্প ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়, তাহলে ডাক্তার আপনার ডায়েটে প্রয়োজনমতো সম্পূরক অন্তর্ভুক্ত করবেন।

পায়ে ক্র্যাম্প, leg cramps

৬. যদি আপনাকে বিছানাতেই থাকতে হয় এবং পায়ের উপর কম্বল চাপিয়ে রাখতে অসুবিধা হয়, তাহলে বিছানার উপর কম্বল বিছিয়ে শুতে পারেন। তা অনেকবেশি আরামদায়ক হবে, উষ্ণতাও বজায় থাকবে।

পায়ে ক্র্যাম্প, leg cramps

৭. আপনার যখন পায়ে ক্র্যাম্প হয় বা ক্র্যাম্প হতে পারে বলে মনে হচ্ছে, তখন পায়ের পেশীগুলো প্রসারিত করুন। আপনি যদি শুয়ে থাকেন তাহলে উঠে বসুন এবং পা সোজা করে মেলুন। আর যদি হাঁটুতে ক্র্যাম্প হয় তাহলে পেশীগুলিকে সহজ করতে একটু হাঁটাচলা করুন বা সোজা হয়ে পা মেলে বসুন এবং পায়ের আঙুলগুলো হাঁটুর দিকে অর্থাৎ ভিতরের দিকে করার চেষ্টা করুন।

৮. আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন, পায়ের ক্র্যাম্প প্রতিরোধ করতে বিকল্প হিসেবে ঠান্ডা বা গরম প্যাক বা তোয়ালে ব্যবহার করতে পারেন কিনা। আপনি ঠান্ডা বা গরম, কোন ধরনের তাপ নিরাপদে ব্যবহার করতে পারবেন তার সঠিক পরামর্শ পাবেন ডাক্তারের কাছে। পেশী শিথিল করতে গরম জলে স্নান করতে পারেন।

৯. যদি আপনার পায়ে ক্র্যাম্প ক্রমাগত হতেই থাকে এবং অসহ্যকর ব্যথা হয়, তাহলে ডাক্তার এটি কমাতে বা প্রতিরোধ করার জন্য উপযুক্ত ওষুধের পাশাপাশি পেশী শিথিল করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।

১০. পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন কলা, খরমুজ, কিশমিশ, দই, রান্না করা পালং শাক, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি আপনার ডায়েটে রাখুন।

পায়ে ক্র্যাম্পের জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন

আপনি যখন ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন তখন পায়ে ক্র্যাম্পের সমস্যা হতে পারে। যা অনেক বেশি বেদনাদায়ক এবং অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

পায়ে ক্র্যাম্প সমস্যা যদি এমনটা হয় তালে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন:

  • পায়ে গুরুতর ক্র্যাম্প এং আপনি যদি পা নড়াতে না পারেন
  • ঘন ঘন হলে
  • একটানা যদি ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়
  • স্ট্রেচিং, ম্যাসাজ এবং ঠান্ডা/গরম সেঁক নেওয়ার পরেও যদি সমস্যা না কমে
  • পেশীর দুর্বলতা সৃষ্টি করে
  • অথবা যদি আপনার পা লাল, ফুলে যায় এবং গরম হয়ে যায়।

আপনি যখন ক্যান্সারের সর্বোত্তম চিকিৎসা পাচ্ছেন, পায়ে বেদনাদায়ক ক্র্যাম্পের সমস্যা হতে পারে। তবে যদি এমন কোনও ঘরোয়া সহজ উপায় জানা থাকে বা আপনি নিজে বাড়িতে চেষ্টা করতে পারেন, সেগুলি অবশ্য়ই চেষ্টা করতে পারেন। প্রয়োজনে আপনার পরিবারের কারও সাহায্য পেশীগুলিকে সহজ রাখার চেষ্টা করুন।  

ক্যান্সারের চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনও সাহায্যের জন্য  9019923337 নম্বরে কল করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন নিকটবর্তী Onco ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারে যান, অথবা ডাউনলোড করুন Onco Cancer Care অ্যাপ।

 আরও পড়ুন : কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং প্রতিকারের উপায়

Related Posts

Leave a Comment