ক্যান্সারের অন্যতম চিকিৎসা হল কেমোথেরাপি। কেমোথেরাপির সাহায্যে ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষকে দ্রুত ধ্বংস করা হয়। ক্যান্সারের ধরনের উপর নির্ভর করে ডাক্তাররা চিকিৎসার একমাত্র উপায় হিসেবে কেমোথেরাপি করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আবার অনেক সময় ক্যান্সারের চিকিৎসার অন্যান্য পদ্ধতির সঙ্গেও কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগই শিরায় (শিরার মধ্যে) ইনজেকশন হিসাবে এবং কখনও কখনও মৌখিক ওষুধ হিসাবে দেওয়া হয়।
ক্যান্সার কোষগুলি খুব দ্রুত বিভাজিত হয়। এবং ক্যান্সারের উৎপত্তিস্থল থেকে দূরে শরীরের অন্যান্য অংশে তাদের ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে। যেহেতু কেমোথেরাপি রক্তের প্রবাহে দেওয়া হয়, ওষুধগুলি রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে যেখানে ক্যান্সারের বিকাশ ঘটছে। অন্যদিকে সার্জারি এবং রেডিওথেরাপি প্রধানত ক্যান্সারের মূল টিস্যুতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
কেমোথেরাপি কার্যকরভাবে অনেক ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা করে। কিন্তু অন্যান্য চিকিৎসার মতো, এটি প্রায়ই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবার এক হয় না। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এগুলি ক্যান্সারের ধরন, অবস্থান, ওষুধ এবং ডোজ এবং আপনার সাধারণ স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। আসুন জেনে তাহলে নেওয়া যাক এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে…
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/03/vomiting-scaled-e1618316650111.jpg)
বমি বমি ভাব এবং বমি
Table of Contents
বমি বমি ভাব এবং বমি
কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। যদিও তা রোগীর চিকিত্সা পদ্ধতি এবং রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি ওষুধ খেতে পারেন। যাইহোক, তার জন্য আপনাকে প্রথম আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। পাশাপাশি আপনার খাবার খাওয়ার সময়, বমি বমি ভাব এবং বমির সমস্যা কমাতে পারে। একবারে বেশি খাবার না খেয়ে সারাদিনে অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার খান। যেমন ধরুন তিনটির পরিবর্তে আপনার খাবারকে 5 থেকে 6 ভাগে ভাগ করুন এবং সেই মতো খান। হালকা খাবার খান, বেশি ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/03/Taste-Change-scaled-e1618225734854.jpg)
স্বাদ পরিবর্তন
এছাড়াও পড়ুন: ক্যান্সার রোগীরা এই পাঁচটি মশলা খাদ্যতালিকায় রাখুন, দারুণ উপকারী
স্বাদ পরিবর্তন
কিছু ধরণের কেমোথেরাপি আপনার স্বাদকে প্রভাবিত করতে পারে। অনেক সময় এমন হয় যে আপনি ঠিকমতো খেতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে রেড মিট আপনাকে দিতে পারে ভিন্ন স্বাদ। তেমনটা হলে এর পরিবর্তে আপনি পোল্ট্রির মাংস, হালকা-গন্ধযুক্ত মাছ বা দুগ্ধজাত পণ্য ব্যবহার করতে পারেন। আপনার পছন্দের খাবার খেয়ে কোনও স্বাদ না পান তবে সেগুলো এড়িয়ে চলুন। এমনটাও হতে পারে, আপনার যদি মনে হল ব্যবহারের থালা, বাসন থেকে ধাতুর স্বাদ পাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে আপনি খাওয়ার জন্য প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/03/Fatigue-1-scaled-e1618225982368.jpg)
ক্লান্তি
আরও পড়ুন: প্যালিয়েটিভ কেমোথেরাপি কী? কেন এটা প্রয়োজনীয়? জানুন
ক্লান্তি
সাধারণ ক্যান্সার রোগীদের সবচেয়ে বেশি যে লক্ষণ দেখা দেয় সেটা হল ক্লান্ত বোধ করা এবং শক্তির অভাব। এর সঠিক কারণ সবসময় জানা যায় না। এটি আরও অনেক কারণের কারণে হতে পারে যেমন রোগ, কেমোথেরাপি, ব্লাড কাউন্ট কম হওয়া, অনিদ্রা, ব্যথা, মানসিক চাপ, ক্ষুধা হ্রাস ইত্যাদি । এর জন্য আপনি দিনে একটু সময় ঘুমাতে পারেন। পারলে কিছুক্ষণ হাঁটতেও পারেন, যা আপনার শরীরে শক্তি যোগাবে।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/03/constipation-scaled-e1618229455482.jpg)
কোষ্ঠকাঠিন্য
কোষ্ঠকাঠিন্য
কেমোথেরাপি, ব্যথার ওষুধ, বমি বমি ভাব কাটানোর ওষুধ বা আপনার খাওয়া-দাওয়া বা কার্যকলাপে পরিবর্তনের ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। আপনার খাবারে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য কমানো যেতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকাও জরুরি। কিন্তু সমস্যা গুরুত্বর আকার ধারণ করে এবং দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা চলতে থাকে তাহলে অবশ্যই অবিলম্বে আপনার ডাক্তারকে জানান।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/03/hair-fall-scaled-e1618229495296.jpg)
চুল পড়া
চুল পড়া
কিছু কেমোথেরাপির ওষুধ চুলের উপর প্রভাব ফেলে। কখনও কখনও কেমোথেরাপি শরীরের সমস্ত চুলকে প্রভাবিত করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে ভ্রু, চোখের পাতা এবং মাথার চুল। যদিও এই সমস্যা অস্থায়ী হয়। আপনি আপনার সমস্ত চুল বা সামান্য হারাতে পারেন। তবে ধীরে ধীরে আবার তা ফিরে আসে। আপনার যদি সব চুল উঠে যায় তাহলে আপনি স্কার্ফ, পরচুলা, বা টুপি ব্যবহার করতে পারেন। চুল উঠে যাওয়ার পর মাথার ত্বকের যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, এটিকে সূর্যের পাশাপাশি তাপ এবং ঠান্ডা উভয় থেকে রক্ষা করতে হবে। আপনি যদি টুপি বা স্কার্ফ না পরেন, তাহলে আপনার মাথার ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/03/skin-changes-scaled-e1618229559857.jpg)
ত্বকের পরিবর্তন
ত্বকের পরিবর্তন
আপনার শরীরের ত্বকের আরেকটি অংশ কেমোথেরাপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। আপনি যদি ইনজেকশনের মাধ্যমে কেমোথেরাপি গ্রহণ করেন, তাহলে চিকিত্সার সময় বা পরে আপনি লালচেভাব, ব্যথা বা ব্যথা অনুভব করতে পারেন। সেটা আপনার নার্স বা ডাক্তারকে অবশ্যই জানান।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/03/sun-scaled-e1618229661475.jpg)
রোদ এড়িয়ে চলুন
রোদ এড়িয়ে চলুন
চিকিৎসার পরে কয়েক মাস আপনি সূর্যের তাপের প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে পারেন। তাই সরাসরি রোদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে যখন প্রখর রোদ হয় (সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে)। সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন (30 বা তার বেশি এসপিএফ সহ) এবং সানস্ক্রিন সঙ্গে লিপবাম ব্যবহার করুন। ফুল প্যান্ট, ফুল হাতা জামা পরে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং আপনার মুখটা ভালোভাবে ঢেকে রাখুন।
![](https://onco.com/blog/bengali/wp-content/uploads/2023/03/immune-system-scaled-e1618229712222.jpg)
দুর্বল ইমিউন সিস্টেম
দুর্বল ইমিউন সিস্টেম
ক্যান্সার এবং এর চিকিৎসা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে। যেহেতু কেমোথেরাপি সুস্থ ইমিউন কোষগুলিকেও মেরে ফেলে, সেক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণের জন্য আরও ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। ফলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে কম সক্ষম হবে, তাই সংক্রমণও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ঘন ঘন হাত ধোয়া, অসুস্থ ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলা এবং অসুস্থতার লক্ষণগুলির জন্য দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া গুরুতর সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে।
এছাড়াও পড়ুন: ক্যান্সার রোগীদের জন্য ৮টি সুপারফুড
কেমোথেরাপি যেকোন ক্যান্সারের চিকিৎসার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যদিও এর দ্বারা সৃষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যে কোনো রোগীর জন্য সীমিত সময়ের জন্য।
কিছু সময় পরে ওষুধ এবং অন্যান্য ব্যবস্থার সাহায্যে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি দূর করা যেতে পারে। কেমোথেরাপি আজ অবধি ক্যান্সারকে পরাজিত করার অন্যতম সফল চিকিত্সা এবং রোগীদের জন্য পুরো প্রক্রিয়াটিকে আরও আরামদায়ক করতে এই ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি ঘটছে।
আরও পড়ুন : নিজেকে সুস্থ রাখার ১৫টি সহজ উপায়