“Fear of a name only increases fear of the thing itself” (Harry Potter, J.K Rowling)
ডাঃ শিখর কুমার, মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট, অনকো ক্যান্সার সেন্টার। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কেন ক্যান্সার রোগীদের তাদের রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা প্রয়োজন এবং কিভাবে তারা অনকোর সাহায্যে বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত পেতে পারেন।
ক্যান্সার। ভয়ে আঁতকে ওঠার জন্য এই একটা নামই যথেষ্ট। যখন কোনও ব্যক্তির এই রোগ ধরা পড়ে, তখন কেবলমাত্র সেই ব্যক্তি একা নয়, তার পুরো পরিবার বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। আচমকা একজনের জীবন নিয়ে টানাপোড়ন শুরু হয়ে যায়। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত এবং অন্ধকার হয়ে পড়ে। হাতে গোনা মাসগুলো তখন ডাক্তারখানা আর ঘর, অ্যাপয়েন্টমেন্ট, ব্লাড টেস্ট, স্ক্যান এবং ক্যান্সারের কোন স্টেজ তার উপর নির্ভর করে রোগী ও তার পরিবারের কাছে চিকিৎসার যে বিকল্পগুলি উপস্থাপিত করা হয়েছে সেই জটিল গোলকধাঁধা বুঝতে বুঝতেই সময় কেটে যায়।
এটি অত্যন্ত জটিল একটি রোগ, ঠিক যেমন অন্যান্য অনেক অ-সংক্রামক রোগ যা মানবজাতিকে আক্রান্ত করে। প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগটি খুব ইউনিক, যেভাবে একজন আক্রান্ত হয় সেভাবেই হোক (উদাহরণস্বরূপ- ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে কফের সাথে রক্ত দেখা দিতে পারে এবং অন্য কারওর নিউমোনিয়া হতে পারে), বা এটি যেভাবে আচরণ করে (একটি ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ের কয়েক মাসের মধ্যে লিভার এবং ফুসফুসে আক্রমণাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে একটি হরমোন রিসেপ্টর পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার কয়েক বছর পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে থাকে)।
মডার্ন মেডিসিন (প্রমাণ ভিত্তিক) বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য নিয়ে এসেছে। ক্যান্সার একসময় দুরারোগ্য ব্যধি ছিল এবং টার্মিনাল পূর্বাভাস বহন করত যা এখন ম্যানেজেবল, ক্রনিক ডিজিজে পরিণত হয়েছে (যেমন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ)। কিছু সাফল্যের গল্পের মধ্যে রয়েছে CML (ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া), হজকিন্স লিম্ফোমার জন্য ABVD কেমোথেরাপি, জার্ম সেল টিউমারের জন্য BEP কেমোথেরাপি, ওভারিয়ান ক্যান্সারের জন্য PARP ইনহিবিটর থেরাপি এবং ফুসফুস, কিডনি ক্যান্সার এবং মেলানোমার জন্য ইমিউনোথেরাপি।
তবে, আমরা যদি অ্যাডভান্স স্টমাক, প্যানক্রিয়াটিক, লিভার ক্যান্সার, অ্যাগ্রেসিভ সারকোমাসের মতো ক্যান্সার নিরাময় করতে চাই তবে আরও অনেক বিষয় মেনে চলতে হবে। ক্যান্সার নিরাময় করার এই কঠিন যাত্রায়, সারা বিশ্বে কয়েক হাজার ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে, যাতে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা আরও উন্নত করা যায় এবং ক্যান্সারমুক্ত থাকা যায়। কয়েক বছরের গবেষণার ফলে ক্যান্সারের চিকিৎসায় ছোট্ট হলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। তাই, গত কয়েক দশক ধরে, ক্যান্সার নিরাময়ের হার ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছে।
ক্যান্সারের (অনকোলজিস্ট) চিকিৎসার জন্য বৈজ্ঞানিক ওষুধের অনুশীলনকারী ডাক্তাররা আরেকটি সমস্যার মুখোমুখি হন সেটা হল যে একজন রোগী একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসা (সার্জারি/কেমোথেরাপি/ইমিউনোথেরাপি ইত্যাদি) থেকে উপকৃত হবে কিনা তা অনুমান করা খুবই কঠিন। অন্যদিকে সংক্রামক রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা, যেখানে প্রায় 100% রোগী আরোগ্য লাভ করে, ক্যান্সার নিরাময়ের হার খুব কমই 100% এর কাছাকাছি যায়। ডাক্তার হিসাবে, আমরা কেবলমাত্র সেই চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারি যা রোগী এবং পরিবারকে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করার এবং এটি নিরাময়ের সর্বোত্তম সুযোগ দেয় এবং উন্নত পর্যায়ে, আমরা রোগীর উপসর্গগুলিকে উপশম করতে পারি এবং তাদের জীবনকাল সর্বাধিক সম্ভাব্য পরিমাণে দীর্ঘায়িত করতে পারি। শারীরিক এবং আর্থিক উভয় ক্ষেত্রেই চিকিৎসার বিষাক্ততার কথা মাথায় রেখে সমস্তটা করা দরকার। আমার মতে, যদি কোনও একটি চিকিৎসা যা রোগীকে সুস্থ করে না কিন্তু তা একটি মধ্যবিত্ত ভারতীয় পরিবারকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয় তা সত্যিই ব্যর্থতা।
ভারতের মতো দেশে ক্যান্সার কেয়ার টুকরো টুকরো খণ্ডে খণ্ডিত। মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই ক্যান্সার এবং প্রাথমিক রোগ নির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানেন না। আমি আমার প্র্যাকটিস চলাকালীন প্রায়শই এই সমস্যা দেখি। সাধারণত নিম্ন/মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি প্রথম কয়েক মাস ধরে বিকল্প প্রতিকার (অপ্রমাণিত সুবিধা) ব্যবহার করে থাকে, ততদিনে তাদের ক্যান্সার ৩য় বা ৪র্থ স্টেজের মতো জটিল অবস্থায় পৌঁছে যায়। যখন লক্ষণগুলি খারাপ হতে শুরু করে, অবশেষে তখন তারা ডাক্তারের কাছে যান। ততক্ষণে, ক্যান্সার দুরারোগ্য ব্যধিতে পরিণত হয়। বিষয়টিকে আরও খারাপ দিকে যেতে থাক, প্রচুর খরচের ভয়ে সরকারী হাসপাতালের দরজায় বসে দিন কাটে, যেখানে আগে থেকেই প্রচুর রোগী ডাক্তার দেখানোর দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছে, সবচেয়ে লেটেস্ট ও কার্যকরী ক্যান্সারের ওষুধও ধরা ছোঁয়ার বাইরে এবং রোগীর সঠিক যত্নআত্তি হচ্ছে না। অন্যদিকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর ফলে বড় অঙ্কের টাকা বিল হওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসায় রোগী আদৌ সুস্থ হবে কিনা সেই প্রশ্ন থাকে, যার ফলে পুরো পরিবার ভয়ঙ্কর আর্থিক সমস্যায় পড়ে যায়।
সঠিক তথ্য সম্পর্কে জ্ঞান একজনের ক্যান্সার জার্নি আকাশ-পাতাল পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে। বেশ কিছু ওয়েবসাইট/ইউটিউব চ্যানেল আছে যারা যাচাই না করেই তথ্য এবং পরামর্শ প্রদান করে, যার মধ্যে কিছু ক্যান্সার রোগীর জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং ক্ষতিকারকও হতে পারে, যদি তারা সেটা অনুসরণ করার জন্য বেছে নিয়ে থাকেন। এই সূত্রগুলি খুব কমই মেডিকেল এক্সপার্টদের দ্বারা যাচাই করা হয় এবং এগুলি এড়িয়ে চলায় ভালো।
এই বিষয়ে, অন-লাইনে ক্যান্সার সম্পর্কিত তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে Onco-এর ভূমিকা অনবদ্য, যা বিশ্বমানের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগ দেয়, ক্যান্সারের সেরা চিকিৎসার বিষয়ে টিউমার বোর্ড (ডাক্তারদের একটি দল) এর মাধ্যমে দ্বিতীয় মতামত এবং 24*7 কেয়ারগিভার সাপোর্ট প্রদান করে থাকে। রোগীরা অনকো ক্যান্সার কেয়ার অ্যাপটিও ব্যবহার করতে পারেন, যা ক্যান্সারের চিকিৎসার কঠিন সময়ে লড়াই করার জন্য নিউট্রিশন গাইডেন্স এবং মানসিক দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার জন্য কাউনসেলিং প্রদান করে। কেয়ারগিভার এবং ক্যান্সার রোগীরাও আমেরিকান NCCN নির্দেশিকা (https://www.nccn.org/guidelines/patients) অ্যাক্সেস করতে পারেন। রোগী যাতে তাদের ক্যান্সার, চিকিৎসার বিকল্প, সাফল্যের হার এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারে তার জন্য প্রতিটি ক্যান্সারের জন্য সহজ ভাষায় একটি পৃথক এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্দেশিকা রয়েছে।