ব্রেস্ট ক্যান্সার: কোন লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হবেন? ব্রেস্ট ক্যান্সার কি নিরাময়যোগ্য? জানাচ্ছেন Dr. Sanjay Sen

by Team Onco
484 views

বিশ্বে সর্বাধিক সাধারণ ক্যান্সারের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং মহিলাদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতি ২৮ জনের মধ্যে একজন মহিলার ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। ব্রেস্ট ক্যান্সার ব্রেস্ট থেকে শুরু হলেও শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। কোন কোন লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হবেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় কী এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন, শুনুন কী বলছেন সার্জিকাল অনকোলজিস্ট ডা. সঞ্জয় সেন।

স্তন ক্যান্সার কী?

ক্যান্সার শরীরের যে কোনও জায়গায় হতে পারে। ব্রেস্টে যে ক্যান্সার হয় সেটাকেই বলা হয় ব্রেস্ট ক্যান্সার। এই ক্যান্সার ব্রেস্ট টিস্যু থেকে শুরু হয়।

স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ কী? কীভাবে বুঝবেন

স্তনে যে ক্যান্সার হয়েছে সেটা সবসময় বোঝা যায় না। কোনও নন-ক্যান্সার জিনিসও স্তন ক্যান্সারের মতো প্রেজেন্ট করতে পারে। তবে হ্যাঁ কিছু কিছু লক্ষণ রয়েছে যেটা থেকে মনে হতে পারে যে এটা ক্যান্সারের দিকে যাচ্ছে। যেরকম, নিপলস থেকে রক্তক্ষরণ, স্তনের মধ্যে শক্ত জিনিস অনুভব, স্তনের উপরে ছোটো গুটি, এগুলো স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ।

তাছাড়া, অনেক সময় প্রাইমারি স্টেজে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে সেটা ধরা পড়ে না। ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। তখন জন্ডিস, প্রচণ্ড হাড়ে ব্যথা ইত্যাদি নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।  

স্তন ক্যান্সারের কারণ কী? অল্প বয়সী মহিলাদের মধ্যে কী ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি?

স্তন ক্যান্সারের কারণ, 10% এর ক্ষেত্রে জেনেটিক মিউটেশন। যে গুলো নিজের পরিবার থেকে আসছে। বাকিটা জিনের মিউটেশন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জিনের মিউটেশন হচ্ছে। যত বয়স বাড়ছে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। 40-50 বছর বয়স থেকে এর প্রবণতা বেশি থাকে। সে জন্য আমরা তাদের বলি, বছরে বছরে আল্ট্রাসাউন্ড করা, গাইনোকোলজিস্ট ডাক্তারের কাছে যাওয়া বা কোনও ক্যান্সারের ডাক্তারের কাছে দেখিয়ে নেওয়া। এছাড়া যাদের পরিবারে ক্যান্সারের প্রবণতা আছে, বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার, তার কম বয়সেও হতে পারে।  

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের কোনও উপায় আছে?

যারা জানে, যে তাদের পরিবারে ব্রেস্ট ক্যান্সার বা ওভারিয়ান ক্যান্সারের সম্ভাবনা আছে তারা সতর্ক হবেন। খুব কম বয়স থেকে তারা গাইনোকোলজিস্টের কাছে দেখিয়ে নেবে, ব্রেস্টে মাঝে মাঝে আল্ট্রাসাউন্ড করবে।

আর যাদের ক্যান্সারের কোনও পারিবারিক ইতিহাস নেই, তারা কী করবেন: লাইফস্টাইল যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ সঠিক সময় খাওয়া দাওয়া করা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা। কারণ যাদের চেহারা খুব ভারী তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সি স্তন ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে, আর একটা হচ্ছে স্তন্যপানও কিন্তু ক্যান্সারের ঝুঁকি কম করে। এছাড়া যাদের মেনোপজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাদের কিছু কিছু হরমোনাল থেরাপি দেওয়া হয়, সেটা থেকেও কিন্তু ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে। সুতরাং সেটা কম নেওয়ায় ভালো হবে। তবে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে সচেতনতা।   

স্তন ক্যান্সারের প্রকার

স্তন ক্যান্সারের প্রকার অনেক রকমের আছে, পাঁচ-ছয়টা ভ্যারাইটি রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায়। যেমন সারকোমা ভ্যারিয়েন্ট, খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। আবার কিছু ভ্যারাইটি আছে যেটা খুব আস্তে আস্তে বাড়ে, সেগুলো ব্রেস্টের মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকে যেমন পিগোলার কার্সিনোমা। ক্যান্সারের ধরনের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা এবং এর চিকিৎসা।

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং এর থেকে বাঁচার উপায়

এখন ব্রেস ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট খুব উন্নত। একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ট্রিটমেন্ট হয় না। যেখানে বিভিন্ন পদ্ধতির কম্বিনেশনে করা হয়। আমরা যেটাকে বলি কম্প্রিহেনশিভ ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট। সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, টার্গেটেট থেরাপি মূলত এই চারটির কম্বিনেশন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া হরমোনাল থেরাপিও আছে। ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সার কোন স্টেজ তার উপর।

স্তন ক্যান্সার কী নিরাময়যোগ্য?

প্রাথমিক পর্যায়ে যে ক্যান্সার ধরা পড়বে, সাধারণত সেটা নিরাময়যোগ্য। যদি না খুব খারাপ ভ্যারাইটির ক্যান্সার না হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে, 5 বছরে 90% বাঁচার সম্ভাবনা আছে। এখন ব্রেস্ট ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট অনেক উন্নত হয়েছে।   

স্তন সংক্ষণ সার্জারি

সংরক্ষণ মানে হল, ব্রেস্টটা পুরো কেটে বাদ দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে, যখন ব্রেস্ট কেটে বাদ দেওয়া হচ্ছে না, তখন সেখানে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। সুতরাং স্তন সংরক্ষণ করতে হলে রেডিয়েশন থেরাপি জরুরি। স্তন সংরক্ষণ সার্জারিতে রিকনস্ট্রাকশন করা হয় তাতে, অর্থাৎ ফাঁকা অংশ ভরাট করে দেওয়া হয়। রোগীকে দেখে বোঝা যাবে না যে ওখান থেকে টিস্যু বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব রোগীর ক্ষেত্রে সংরক্ষণ করা যাবে না, এক্ষেত্রে কিছু মানদণ্ড রয়েছে।  

স্তন ক্যান্সারের তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা কতটা?

থার্ড স্টেজে যদি সমস্ত রকম ট্রিটমেন্ট ভালোভাবে হয়ে থাকে তাহলে পাঁচ বছরে প্রায় 85 জনের বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি স্টেজ ফোর হয় তাহলে সংখ্যাটা কমে 30 জনে চলে আসবে।

পুরুষদের স্তন ক্যান্সার?

পুরুষদেরও ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে। তবে মহিলাদের এবং পুরুষদের ব্রেস্ট টিস্যুর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। সুতরাং সব কটা ভ্যারাইটির ব্রেস্ট ক্যান্সার যেগুলো মেয়েদের হয়, সেগুলো পুরুষদের হবে না। পুরুষদের সাধারণ একটার ভ্যারাইটিরই হয়। কিন্তু পুরুষদের ক্যান্সার খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে। মহিলাদের থেকে পুরুষদের অনেকটা দেরিতে ধরা পড়ে।    

Related Posts

Leave a Comment