সুপারফুড (Superfood) হল এমন খাবার – বেশিরভাগই ভেষজ কিন্তু কিছু মাছ এবং দুগ্ধজাত খাবার স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো। এতে রয়েছে উচ্চ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। সুপারফুড খুবই পরিচিত একটি শব্দ, যা সুস্বাস্থ্যকর, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, ভেষজ খাবার এবং পরিপূরকগুলির সমার্থক।
একজন ব্যক্তির ক্যান্সার ধরা পড়ার পর, তিনি তার জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন হয়ে ওঠেন। অনেক রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করেন। যদিও এটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করা উচিত। আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে ডায়াটেশিয়ান আপনাকে সঠিক ডায়েট পরিকল্পনা করতে সাহায্য করতে পারেন।
ক্যান্সার রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি স্বাস্থ্যকর শরীরের ওজন বজায় রাখতে এবং রোগ নিরাময় এবং আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর খাবার সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, শরীরের টিস্যুগুলিকে ভেঙে যাওয়া রোধ করতে এবং নতুন টিস্যু তৈরি করতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে শরীরের হাইড্রেশন স্তর বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং গবেষণা নেই যে নির্দিষ্ট কোনও খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে বা রোধ করতে পারে। তবে সঠিক পুষ্টি সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তা ক্যান্সার রোগীদের জন্য আরও বেশি। অর্থাৎ সুষম খাদ্য, ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত ভেষজ খাবার আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সেইসঙ্গে চিকিৎসা চলাকালীন শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়।
এখানে আমরা ক্যান্সার রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার সম্পর্কে আলোচনা করব।
ক্যান্সার রোগীর কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত?
ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, সার্জারি, ইমিউনোথেরাপি বা এর মধ্যে থেকে কোনও সংমিশ্রণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি প্রায়শই ওজন এবং শক্তি হ্রাস করে এবং আপনাকে ক্লান্ত করে দেয়।
চিকিৎসা চলাকালীন শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখতে আপনার দরকার অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং প্রয়োজন। এছাড়াও ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় ভালো সারা পাওয়া যায়, যখন আপনি পর্যাপ্ত ক্যালোরি এবং প্রোটিন গ্রহণ করেন এবং শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পান।
অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং প্রোটিন পেতে এখানে কিছু টিপস রইল:
ক্যান্সার রোগীদের জন্য সুপারফুড
সুপারফুড সহজেই হজম হয়, তৈরি করাও সহজ এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর যা আপনাকে ক্যান্সারের চিকিৎসার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াগুলির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য় করে। ক্যান্সার রোগীর খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে এমন কিছু সুপারফুড নীচে উল্লেখ করা হল:
১. বেরি এবং অন্যান্য ফল (Berries and other fruits): যে ফলগুলি খেতে সহজ, সতেজ এবং জলের মাত্রা বেশি রয়েছে সেগুলি হল সবচেয়ে সেরা। এর মধ্যে রয়েছে বেরি, তরমুজ, কলা, আনারস, নাশপাতি ইত্যাদি।
ব্লুবেরিতে (Blueberries) বেশ কিছু ফাইটোকেমিক্যাল এবং পুষ্টি উপাদান রয়েছে যার মধ্যে অ্যান্টি-ক্যান্সার প্রভাব, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে এবং এটি ডিএনএ ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে।
রাসবেরি এবং স্ট্রবেরি (Raspberries and strawberries) ভিটামিন সি, ফাইটোকেমিক্যাল এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
টম্যাটোতে (Tomatoes) লাইকোপিন নামক একটি ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কম করতে পারে।
২. শাক (Dark leafy vegetables): শাকসবজি যেমন কালে (Kale) এবং পালং শাক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি ফাইবা এবং ফোলেট সমৃদ্ধ, যা কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ফোলেট নতুন কোষ তৈরি করতে এবং ডিএনএ মেরামত করতে সাহায্য করে।
কালের মধ্যে ক্যারোটিনয়েড রয়েছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ায়। এই প্রতিরক্ষা ক্ষমতা ফ্রি রেডিক্যালসগুলিকে ডিএনএ-র ক্ষতি থেকে বাধা দেয়। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোটিনয়েড সমৃদ্ধ যেমন জেক্সানথিন এবং লুটেইন রয়েছে যা শরীর থেকে ফ্রি রেডিক্যালস দূর করে।
৩. গাজর (Carrots): গাজরের মধ্যে রয়েছে বেটা-ক্যারোটিন (একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট), ভিটামিন এবং ফাইটোকেমিক্যাল যা বিভিন্ন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এছাড়াও গাজরে ফ্যালকারিনল নামক প্রাকৃতিক কীটনাশন রয়েছে, যার মধ্যে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে।
জার্নাল অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে রান্না করা গাজরের থেকে কাঁচা গাজরে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। গাজর সিদ্ধ করে কেটে নিন, এতেও ফ্যালকারিনল সহ গাজরের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
৪. দানা শস্য (Whole grains): দানা শস্য প্রচুর ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ফাইটোকেমিক্যালস, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। গোটা দানা শস্যে এমন কিছু পদার্থ থাকে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে, যার মধ্যে রয়েছে স্যাপোনিন, যা ক্যান্সার কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি রোধ করতে পারে এবং লিগন্যানস, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
চিনের সুচো ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, যে উচ্চ ফাইবার উপাদান, হরমোন নির্ভর ক্যান্সারের ক্রিয়াকে পরিবর্তন করতে পারে। এমন খাবার বেছে নিন যাতে ১০০% গোটা শস্য দানা রয়েছে।
৫. মাছ এবং মাংস (Meat and poultry): সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রোটিনেরও প্রয়োজন। মুগরির মাংস, মটন, মাছ সবই প্রোটিনের ভালো উৎস। তবে প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলা ভালো। এছাড়াও, শুধুমাত্র সঠিকভাবে রান্না করা, মাছ, মাংস, ডিম খান। কাঁচা বা আধসেদ্ধ খেলে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
৬. ক্রুসিফেরাস ভেজিটেবল (Cruciferous vegetables): ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপির মতো সবজিতে গ্লুকোসিনোলেটস নামক ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা প্রতিরক্ষামূলক এনজাইম তৈরি করে। এই সবজি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা ব্রকলি বা সেদ্ধ করে খেতে পারেন, তাতে সামান্য রসুন এবং অলিভ অয়েল যোগ করে নিন।
৭. দই (Yoghurt): টক দই হজমের জন্য খুব উপকারী, এটি নির্দিষ্ট প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং খাওয়াও সহজ। বাড়তি স্বাদ আনতে এতে সামন্য দারুচিনি, বেরি বা বাদাম যোগ করা যেতে পারে।
৮. সোয়া (Soy): সোয়াতে আইসোফ্ল্যাভোনস নামে একটি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পরিমিত পরিমাণে সোয়া, যেমন সোয়া দুধ, টোফু খাওয়া যেতে পারে।
সবমিলিয়ে আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে খাদ্য তালিকা হতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ। একটি সুপারপ্লেট ডায়েট হতে হবে যাতে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পৌঁছায়।
আরও পড়ুন –
ক্যান্সারের চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনও সাহায্যের জন্য 9019923337 নম্বরে কল করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন নিকটবর্তী Onco ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারে যান, অথবা ডাউনলোড করুন Onco Cancer Care অ্যাপ।
(https://www.utahfoodbank.org)
ইমিউনোথেরাপিকে বায়োলজিক থেরাপিও বলা হয়। ক্যান্সার ইমিউনোথেরাপির লক্ষ্য ক্যান্সারের সাথে লড়াই করার জন্য ইমিউন সিস্টেমের শক্তিকে শক্তিশালী করা এবং বজায়…
কোলন ক্যান্সার হল এক ধরনের ক্যান্সার যা বৃহদান্ত্রের অংশে (কো-লোন) শুরু হয়। কোলন হল পরিপাকতন্ত্রের চূড়ান্ত অংশ। কোলন ক্যান্সার সাধারণত…
ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে কে না ভয় পায় বলুন! কিন্তু যখন শিশুদের ক্যান্সার ধরা পড়ে তখন তাদের বাবা-মায়ের কাছে সময়টা…
কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে একটি হল শরীরের সামগ্রিক ব্লাড সেল কাউন্ট উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়া।
এইচপিভি হল সবচেয়ে সাধারণ যৌন-সংক্রমিত সংক্রমণ, এবং প্রায় সমস্ত যৌন সক্রিয় পুরুষ বা মহিলা তাদের জীবনের কিছু সময়ে এইচপিভিতে সংক্রমিত…
যেহেতু ক্যান্সার তার প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ দেখায় না, অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার প্রায়শই উন্নত পর্যায়ে ধরা পড়ে। সঠিক চিকিৎসা…