কাপ, ক্যান্সার, ক্রিকেট এবং যুবরাজ সিংহ! এক হার না মানা গল্প

 

৩৬২ রান, ১৫ উইকেট, যুবরাজ সিংহ (Yuvraj Singh) আর একটা মারণাত্মক টিউমার। সালটা ২০১১, এপ্রিল মাস। বিশ্বকাপ নিয়ে মেতে উঠেছে গোটা বিশ্ব। সেই সঙ্গে উচ্ছ্বাসে ভাসছে ক্রিকেটপ্রেমী ভারতীয়রা। ভারতের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপে একের পর এক ম্যাচে ইন্ডিয়াকে জেতাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংহ। আচমকা একটা দুঃসংবাদে শোকের ছায়া নেমে আসে ক্রিকেট জগতে। ক্যান্সারে আক্রান্ত যুবরাজ সিংহ। তাহলে কী এখানেই তাঁর কেরিয়ার শেষ? ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে কী জিততে পারবেন? ক্যান্সারকে হারিয়ে ফের কী তিনি ক্রিকেটের মাঠে ফিরতে পারবেন? এমন অনেক প্রশ্ন উঠেছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে।

যুবরাজ সিংহের বাঁ দিকের ফুসফুসে ক্যান্সার টিউমার ধরা পড়ে, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে ‘মিডিয়াস্টিনাল সেমিনোমা ক্যান্সার’ (Seminoma Lung Cancer) বলা হয়। সাধারণত বুকের মাঝখানে দুটি ফুসফুসের মাঝে এটি হয়ে থাকে। সেমিনোমা হল জার্ম সেল টিউমার।

ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে যুবরাজ বস্টন এবং ইন্ডিয়ানাপোলিসে কেমোথেরাপির জন্য যান। কেমোথেরাপির তৃতীয় এবং চূড়ান্ত পর্বের পর মার্চ ২০১২ সালে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এপ্রিলে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। এমনটাই ছিল যুবরাজের হার না মানা গল্প।

যুবরাজ বলেন, আপনি যখন প্রথমবার ক্যান্সারের নাম শুনবেন, আপনি সত্যিই ভয় পেয়ে যাবেন। ক্যান্সার। যা অনেকটা মৃত্যুদণ্ডের মতো। আপনার জীবন আপনাকে কোথায় নিয়ে যাবে সেটা বুঝতেও পারবেন না। 

ক্রিকেটের মাঠে দাপট, অর্থ, খ্যাতি, সবমিলিয়ে যুবরাজ তখন কেরিয়ারের শীর্ষে। ২০১১ বিশ্বকাপে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স সকলের নজর কেড়েছিল। ম্যান অফ দ্য সিরিজ নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাস তখন চরমে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ক্যান্সারের খবর।

যুবরাজের নিজের কথায়, টুর্নামেন্ট চলাকালীন বেশকিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিয়েছিল কিন্তু তিনি সেগুলো উপেক্ষা করেছিলেন যাতে খেলায় মনোনিবেশ করতে পারেন। যুবি (ভক্তদের কাছে তিনি এই নামেই পরিচিত) পরে বলেন ২০১১ সালের প্রথম দিকে গুরুতর লক্ষণগুলি অনুভব করতে শুরু করেন, যেমন তীব্র শ্বাসকষ্ট, থুথুর মধ্যে রক্ত। সেইসঙ্গে ক্লান্ত অনুভব করতে থাকেন, যা তাঁর কেরিয়ারে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

প্রথমে আমি এটিকে অস্বীকার করেছিলাম – ভারতের হয়ে খেলা আমার স্বাস্থ্যের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ  ছিল এবং কয়েক মাস আমি থুথুতে রক্ত আসা এবং স্ট্যামিনা কমে যাওয়াকে উপেক্ষা করেছিলাম।”- যুবরাজ সিংহ

পরবর্তীকালে ডাক্তারের কাছে গেলে এই লক্ষণগুলির পিছনে তিনি আসল কারণটা বুঝতে পারেন, যেটা তাঁর কাছে একটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল।

তাঁর সেমিনোমা ফুসফুস ক্যান্সার ছিল। বাঁ দিকের ফুসফুসে একটি টিউমার ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছিল। যা ফুসফুস ও ধমনীতে চাপ সৃষ্টি করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছিল। চিকিৎসা এবং কেমোথেরাপির জন্য তাঁকে ক্রিকেট থেকে বিরতি নিতে হয়, এটি একটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর চিকিৎসা প্রক্রিয়া বিশেষ করে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি খুব মারাত্মক।

“যখন কেউ আমাকে দেখতে বা শুনতে পেত না, আমি শিশুর মতো চিৎকার করে কাঁদতাম। ক্যান্সার কী করবে সেই ভয়ে নয়, আমি এই রোগটি চাইনি সেই কারণে। আমি চেয়েছিলাম আমার জীবন স্বাভাবিক হোক, যা আর হতে পারে না!” – যুবরাজ সিংহ

যুবির যদিও ফুসফুসের ক্যান্সার ছিল না। ফুসফুসের ক্যান্সার অনেক বেশি মারণাত্মক, এতে বাঁচার হার খুবই কম। সৌভাগ্যবশত, যুবরাজের যে রোগটি ছিল (সেমিনোমা ফুসফুসের ক্যান্সার) সময়মতো চিকিৎসা করালে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে বিবেচিত। যুবি খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি যদি আবার ক্রিকেট খেলতে চান তবে তার সামনে একমাত্র বিকল্প হল সঠিক ক্যান্সারের চিকিৎসা করা। কেমোথেরাপি শুরু করেন এবং ২০১২ সালে তিনি বস্টন এবং ইন্ডিয়ানাপোলিসে যান, যারা আগে ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসা করেছেন সেই সমস্ত ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করেন।

কেমোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব ভয়ঙ্কর ছিল। কিন্তু আমি বদ্ধপরিকর ছিলাম যে আমাকে ফিরতে হবে এবং দেশের হয়ে খেলতে হবে। এটিই একটা জিনিস যা আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে।– যুবরাজ সিংহ

তৃতীয় কেমোর পর তিনি দেশের হয়ে খেলতে ভারতে ফিরে আসেন।  তিনি কি তার প্রত্যাবর্তন করতে পেরেছিলেন?

কীভাবে!

সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে ভারত Vs  আফগানিস্তান ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি ম্যাচের অফিসিয়াল ট্রান্সক্রিপ্ট অবশ্য এটাই বলে।

বালাজি প্রথম সাফল্য দিয়েছিলেন এবং তারপরে যুবরাজের ট্রিপল স্ট্রাইক হয়েছিল, যা আফগান চ্যালেঞ্জ থেকে জীবনকে ছিনিয়ে নিয়েছিল।

বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে যুবরাজ ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। সেইসঙ্গে রোগ নির্ণয় করে ক্যান্সারের সাথে সঠিক উপায়ে লড়াই করা এবং চিকিৎসার উপর আস্থা রাখার কথা বলেন।

যেটা ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য – সে এক রোগী হোক, বা ক্যান্সার রোগীর পরিবারের সদস্য, এমনকি ডাক্তার যারা দিনরাত ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন। যুবরাজের এই হার না মানা গল্প অনেকেই অনুপ্রেরণা জোগাবে।    

 

Team Onco

Helping patients, caregivers and their families fight cancer, any day, everyday.

Recent Posts

  • news

Casibom Canlı Casıno Oyunları – Canlı slot oyna

You’ll be able to use any of your trusted and secure banking methods, such as credit or debit cards, or…

1 month ago
  • news

Mostbet Online Casino Sitesi | Rulet sitesii

Buna Slotlar, Blackjack, Rulet, Masa oyunları, VIP Sadakat Programı ve çok daha fazlası dahildir. Bu seçeneklerin her biri sonuncusu kadar…

1 month ago
  • news

Bonuslar ve ücretsiz çevirmeler 1Win – Casino sitesii

Biz lisanslı bir şirketiz ve yalnızca büyük yetki alanlarında oynuyoruz. Her oyunun adil olduğundan ve gerçek zamanlı olarak ödendiğinden emin…

1 month ago
  • news

Casibom Türkıye Canlı Bahıs — Canli Casino Giriş

Yeni gerçek para hesabınızı kaydettikten sonra, güvenli ve güvenilir bankacılık yöntemlerimizden herhangi birini kullanarak para yatırabilirsiniz. Para yatırma işleminiz tamamlanır…

1 month ago
  • news

Live 1xbet Russia Casino 💰 Offers free spin 💰 Jackpot Slots & Games

Thanks to our mobile casino, your time is both flexible and flexible! We’ll give you a preview of the bonuses…

1 month ago
  • seo-links

BLACK SEO LINKS, BACKLINKS, SOFTWARE FOR MASS BACKLINKING

A team of experienced SEO specialists who specialize in black site promotion in Google search results. We offer hacked sites…

1 month ago