ক্যান্সার রোগটার সঙ্গে এখন আমরা সবাই পরিচিত। যেভাবে দিন দিন চারদিক থেকে ক্যান্সারে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়, তাতে রোগটি নতুন কিছু নয়। তবে এই মারণ রোগকে কে না ভয় পায় বলুন। ক্যান্সারের থাবা বড়সড় দুর্যোগ ডেকে আনে। কেবলমাত্র যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত তাকেই নয়, পুরো পরিবারকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।
ক্যান্সারের ধরন বা স্টেজ যাই হোক না কেন, সমস্ত ক্যান্সার রোগীদের একটি সাধারণ দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হতে হয়: ‘আমার কি অন্যদের সাথে আমার রোগের কথা শেয়ার করা উচিত?’
বিজ্ঞান ও চিকিৎসা পদ্ধতির এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আজও আমাদের দেশে অনেকে ক্যান্সার নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ক্যান্সার রোগী এবং তাদের পরিবার অনেক সময় বিষয়টি চেপে যান। যদিও এর বহু কারণ আছে।
এখনও সমাজের বহু ক্ষেত্রে ক্যান্সারের কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। যার ফলস্বরূপ রোগটি সম্পর্কে নানা ভুল ধারণা রয়েছে মানুষের মনে।
এর থেকে বাঁচার জন্য, কিছু রোগী এবং তাদের পরিবার ক্যান্সারের কথা গোপন রাখেন, কেউ কিছু জানতে চাইলে নানা অজুহাত দেন, এমনকী নিয়মিত চিকিৎসাও করাতে চান না। কিন্তু ক্যান্সার রোগটি চেপে যাওয়ার বিষয় নয়, এখন এর অনেক উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি এসেছে। মারণরোগের সঙ্গে লড়াই করতে প্রয়োজন সচেতনতা।
আপনার মনে হতেই পারে যে রোগের কথা অন্যদের থেকে গোপন রাখা ভালো। কিন্তু পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে যদি আপনার রোগ নিয়ে আলোচনা করেন তার কিন্তু অনেক সুবিধা রয়েছে, সেগুলিও বিবেচনা করে দেখুন।
ক্যান্সারের চিকিৎসা কয়েক মাস ধরে চলে। এর লক্ষণগুলি ছাড়াও, শরীরের ব্যথা এবং ক্লান্তি দেখা দেয়, চিকিৎসার ফলে চুল পড়া, ওজন কমে যাওয়া, ত্বক কালো হওয়ার মতো নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।
মাসের পর মাস এই লক্ষণগুলি লুকিয়ে রাখা শুধু কষ্টকরই নয়, নিরর্থকও বটে। অহেতুক অন্যদের থেকে আপনার রোগ লুকানোর পরিবর্তে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মনোবল বাড়ান, চিকিৎসার মাধ্যমে নিজে কীভাবে আরোগ্য লাভ করবেন সেদিকে নজর দিন।
রোগ ধরা পড়ার আগে আপনি যেভাবে কাজকর্ম, ওঠাবসা করতেন, চিকিৎসা চলাকালীন সেটা সম্ভব নয়। আপনার চিকিৎসার সময় আপনার চারপাশের মানুষদের থেকে বাড়তি সাহায্যের প্রয়োজন হবে এবং আপনি যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছেন, তাতে সকলকে পাশে পাবেন। কিন্তু আপনি যদি আপনার রোগ সম্পর্কে আপনার বন্ধু, পরিবার বা সহকর্মীদের না জানান তাহলে তারা বিষয়টি জানতেও পারবে না। স্বাভাবিকভাবেই আপনার পাশে কাউকে পাবেন না।
নিজেকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে অন্যদের সাথে কথা বলুন। আপনি বর্তমানে কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তা তাদের জানানো আপনার জন্যই ভালো হবে। তবেই তো প্রিয়জনেরা আপনার খেয়াল রাখতে পারবেন, ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করছেন কিনা, সময়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন কিনা এবং আপনি যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন তার যথা সম্ভব ব্যবস্থা করবেন।
চিকিৎসা চলাকালীন শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো যায় না, এইসময় কোনও কিছুই সেভাবে ভালো লাগে না। বিশেষ করে সামাজিক কোনও অনুষ্ঠানে যেতে আপনার ইচ্ছে নাও হতে পারে। আবার অনেক সময় ইচ্ছে থাকলেও শরীর বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন ধরুন, কেমোথেরাপির একটি সেশনের পর শরীর এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, যে সেইসময় পারিবারিক কোনও গেট-টুগেদার বা নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে ইচ্ছে করে না।
এভাবে বারবার পারিবারিক অনুষ্ঠানে আপনার অনুপস্থিতি ভুল বোঝাবুঝির কারণ হতে পারে। কারণ তারা জানেনই না যে আপনি বর্তমানে একটি রোগের সাথে লড়াই করছেন।
উপরিউক্ত সুবিধাগুলি থাকা সত্ত্বেও, আপনি এখনও আপনার রোগের বিষয়টি কারও সাথে শেয়ার করতে নাও পারেন। কিন্তু আপনি যদি বিষয়টি অন্যদের সাথে শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে নিচে উল্লেখিত তথ্য পড়ুন যেটা আপনাকে সাহায্য করবে।
প্রথম ধাপ হল, আপনাকে এটা মেনে নিতে হবে যে ক্যান্সারের কথা জানতে পেরে সবাই কিন্তু ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেবে না। কেউ কেউ আপনার পাশে দাঁড়াবে এবং এই মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার উৎসাহ জোগাবে। কেউ আপনাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করতে পারে, দুঃখিত হতে পারে। আবার কেউ বাইরে থেকে সহানুভূতিশীল হওয়ার অভিনয় করতে পারে যেটা খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার।
মনে রাখবেন, ক্যান্সার হয়েছে এই ব্যাপারটা নিজের মেনে নেওয়া যতটা কঠিন, অন্যদের জন্যও এটা সহজ হবে না।
আসুন কিছু সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নি, ক্যান্সারের খবর পাওয়ার পর আপনার পরিবার-পরিজনেরা কেমন ব্যবহার করতে পারেন খানিকটা হলেও আগে থেকেই বুঝতে পারবেন।
অন্যদের কাছে আপনার ক্যান্সারের খবর জানানোর আগে, আপনাকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে:
কাকে বলবেন?
আপনার রোগ সম্পর্কে কার জানা দরকার সেই সিদ্ধান্ত আপনি নিজেই নিতে পারেন। অবিলম্বে পরিবারের কেউ বা খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে কাউকে দিয়ে শুরু করতে পারেন। আপনি যদি কর্মরত হন তাহলে আপনার ম্যানেজারকে জানাতে পারেন, যাতে বাঁধা ধরা সময়ে আপনাকে না ফেলা হয় বা কাজের চাপ কমানোর কথাও জানাতে পারেন।
তবে বাচ্চাদের বিষয়টি জানানো চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আপনি আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাহায্য নিতে পারেন যারা ইতিমধ্যেই রোগটি সম্পর্কে জানে, যাতে এটি বাচ্চাদের কাছে বিষটি ধীরে সুস্থে বলতে পারেন।
কবে বলবেন?
বাড়ির লোকজন কখন ফাঁকা থাকবেন এবং আপনার কথা মন দিয়ে শুনতে পারবেন দিনের এমন একটা সময় বেছে নিন। যখন তারা কম ব্যস্ত থাকবে এবং সেই মতো খবরটা সকলকে জানান।
কিভাবে বলবেন?
যদিও আপনি আপনার কিছু সহকর্মী এবং বন্ধুদের ইমেল করতে পারেন। তবে আপনার কাছের মানুষদের খবরটি ব্যক্তিগতভাবে জানান, সেটাই ভালো হবে।
বাড়ির লোকজন কেমন ব্যবহার করবেন বা তারা কী কী প্রশ্ন করবেন, এইসব নিয়ে যদি আপনি চিন্তিত হন তাহলে আপনি কোনও বন্ধুর সাহায্য নিন। পরিবারের সদস্যদের ক্যান্সারের খবরটি জানাতে বন্ধু-বান্ধবরা সাহায্য করতে পারেন। একজন কেউ পাশে থাকলে আপনি অনেকটা শান্তভাবে অন্যদের বিষয়টি বোঝাতে পারবেন।
কতটুকু বলবেন?
আপনি সিদ্ধান্ত নিন যে আপনি শুধু রোগ সম্পর্কে জানাবেন নাকি বর্তমানে আপনার শারীরিক অবস্থা কেমন সে সম্পর্কেও কথা বলতে চান। আপনি যদি কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে না চান, তবে আপনার কাছে বলার বিকল্প আছে ‘আমি যখন এর সম্পর্কে কথা বলতে প্রস্তুত হব তখন আমি এটি জানাব।’
যখন আপনি ক্যান্সারের খবরটি জানাবেন তখন আপনাকে এইরকম কিছু সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হতে পারে:
যদিও আপনি কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন, আবার কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছে নাও থাকতে পারে। প্রশ্নের উত্তর না থাকলে ‘আমি এখনও জানি না’ এমনটা বলতে পারেন।
অন্যদের সাথে আপনার রোগের বিষয়টি জানানোর অনেক সুবিধার মধ্যে একটি হল এই রোগ সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটবে। যদিও অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা মোটেও সহজ বিষয় নয়, তবে এতে আপনার উপকারই হবে।
পরিবারকে জানানো অনেক বড় একটা ব্যাপার, তারপর নিজেকে একটু সময় দিন যাতে শারীরিক ও মানভাবে বিশ্রাম নিতে পারেন। এই মানুষগুলোর সাথে ভবিষ্যতে আপনি শুধুমাত্র ক্যান্সার নিয়েই কথা বলবেন তা কিন্তু নয়। এর বাইরেও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আপনি তাদের সম্পর্কে আলোচনা করতে চান সেটা জানান। সেটা আপনার মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য দুটোর জন্যই উপকারী হবে।
পরিবার ও পরিজনেরা তাদের ভালো মন্দ নিয়ে আলোচনা করছেন, আচমকা আপনাকে দেখে তারা কথা ঘুড়িয়ে দিলেন। এমন অনেক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন, যখন আপনার পরিচিতরা আপনার পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নিজেদের নিয়ে আলোচনা এড়াতে যান।
একইভাবে, আপনি যখন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছেন তখন আপনার বন্ধুরা তাদের দৈন্দদিন জীবন সম্পর্কে কথা বলতে দোষী বোধ করতে পারে। তাই আপনি তাদের বোঝান যে তারা যে সুখী এবং নিয়মিত জিনিসগুলি করছে তা শুনে আপনার ভালো লাগে community@onco.com-এ আমাদের লিখুন এবং আপনি কীভাবে আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে আপনার রোগ নির্ণয় বিষয়টি জানিয়ে়ছেন তা শেয়ার করুন।
আরও পড়ুন – জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি কাদের বেশি? শুনুন কী বলছেন মেডিকেল অনকোলজিস্ট
ইমিউনোথেরাপিকে বায়োলজিক থেরাপিও বলা হয়। ক্যান্সার ইমিউনোথেরাপির লক্ষ্য ক্যান্সারের সাথে লড়াই করার জন্য ইমিউন সিস্টেমের শক্তিকে শক্তিশালী করা এবং বজায়…
কোলন ক্যান্সার হল এক ধরনের ক্যান্সার যা বৃহদান্ত্রের অংশে (কো-লোন) শুরু হয়। কোলন হল পরিপাকতন্ত্রের চূড়ান্ত অংশ। কোলন ক্যান্সার সাধারণত…
ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে কে না ভয় পায় বলুন! কিন্তু যখন শিশুদের ক্যান্সার ধরা পড়ে তখন তাদের বাবা-মায়ের কাছে সময়টা…
কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে একটি হল শরীরের সামগ্রিক ব্লাড সেল কাউন্ট উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়া।
এইচপিভি হল সবচেয়ে সাধারণ যৌন-সংক্রমিত সংক্রমণ, এবং প্রায় সমস্ত যৌন সক্রিয় পুরুষ বা মহিলা তাদের জীবনের কিছু সময়ে এইচপিভিতে সংক্রমিত…
যেহেতু ক্যান্সার তার প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ দেখায় না, অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার প্রায়শই উন্নত পর্যায়ে ধরা পড়ে। সঠিক চিকিৎসা…